সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেশি, মৃত্যু কম

ডেঙ্গু জ্বরের রোগী সরকারি হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুও কম। গত চার বছরে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু বিষয়ে সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশনা বা ট্রিটমেন্ট প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়ার চর্চা বেশি। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৫১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১৮ জন মারা গেছে সরকারি হাসপাতালে। এদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাকি ৩৩ জন মারা গেছে বেসরকারি হাসপাতালে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল তিনটি হাসপাতালও আছে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে একটি আধা সরকারি হাসপাতালে।

বরাবরের মতো এ বছরও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার এই হাসপাতালে ৩৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৬৯ জন। একজনেরও মৃত্যু হয়নি ঢাকা মেডিকেলে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু বা যেকোনো রোগের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই ঢাকা মেডিকেল চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন রোগী দেখার সময় জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ সকল পর্যায়ের চিকিৎসকেরা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার নির্দেশনা মেনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরো কাজটি করা হয় দলগতভাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে। অধিদপ্তরের পুরোনো হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ১৯ জন ও সরকারি হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু হয়।

ব্যতিক্রম দেখা যায় ২০১৭ সালের মৃত্যু তালিকায়। এ বছর ৮ জন মারা যায়। এর মধ্যে ২ জন মারা যায় বেসরকারি হাসপাতালে, ৪ জন ঢাকা শহরের সরকারি হাসপাতালে। বাকি ২ জন দুটি উপজেলা হাসপাতালে। উপজেলা পর্যায়ে মৃত্যুর ঘটনা এর আগে ও পরে আর ঘটেনি।

>

চার বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৫১ জন মারা গেছে
১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে

এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে ৯ জন মারা যায় বেসরকারি হাসপাতালে। আর ২০১৫ সালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর কোনোটি সরকারি হাসপাতালে হয়নি।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, প্রশিক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন আছে। সেই সুযোগ নিয়ে প্রটোকল মেনে সরকারি চিকিৎসকেরা যেভাবে কাজ করেন, বেসরকারি পর্যায়ে তার ঘাটতি আছে। আবার বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। জরুরি সময়ে তাঁরা হয়তো উপস্থিত হতে পারেন না।

 একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা অনেকটা জরুরি চিকিৎসার মতো। জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা কাঠামো, তা অনেক বেসরকারি হাসপাতালে অনুপস্থিত। এ ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন।

বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে তুলনামূলকভাবে বিত্তবানেরাই বেশি যান। তাঁরা কি রোগের জটিল স্তরে পৌঁছানোর পর হাসপাতালে যান, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা হওয়া দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী গতকাল দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ৫২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। আর সরকারি ৯টি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৯২৯ জন রোগী। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৬ জন রোগী।