নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে: মেনন

রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি
রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, কোনো কিছু পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব না করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সমতার রাজনীতি এবং ১৪ দলকে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের আয়োজনে কর্নেল তাহেরের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার বিকেলে এক আলোচনা সভায় মেনন এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন তাঁর ১৪ দলের অন্য শরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ান। ক্ষমতার পক্ষে কতটুকু থাকা যায়, কী পাওয়া গেল না-পাওয়া গেল, তার বেদনায় আশাহত না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি ১৪ দলকে পুনর্বিন্যস্ত করার কথা বলেন। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে করা পুরোনো চুক্তি সমতার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের রাজনীতি করার কথাও বলেন।

হাইকোর্টের দেওয়া রায় কর্নেল তাহেরের বিচার অবৈধ, এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের এই নেতা বলেন, কর্নেল তাহেরের পাশাপাশি সেই সময়ে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে। অনেকেই অনেক সময় সে সময় বিচারকার্যের জন্য কমিশন গঠন করে শাস্তি দাবি করেছেন। তবে রাশেদ খান মেনন সে ব্যাপারে আশাবাদী নন। কারণ তিনি এখন তার কোনো লক্ষণ দেখছেন না। মেনন বলেন, ‘কারণ আজকের রাজনীতিটা একদম গুলিয়ে গেছে। মুখে সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলছি। কিন্তু সব সম্পদ ৫ ভাগ লোকের হাতে।’ তিনি আরও বলেন, ৫ শতাংশ মানুষ বিপুল সম্পদের অধিকারী। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষের জন্য লড়াই করতে হবে। তাহলেই কর্নেল তাহেরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হবে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতের গ্যাসের যে তুলনা দিয়েছেন, সেটা সঠিক নয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। এলএনজি যাঁরা আমদানি করছেন, তাঁরা সুবিধাভোগী হবেন।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের শিখরে উঠছি ঠিকই কিন্তু আমরা বারবার গহ্বরের দিকে তলিয়ে যাচ্ছি।’

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানোর সমালোচনা করে এ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) নেওয়ার দাবি জানান রাশেদ খান মেনন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এখন ২২ পরিবারের জায়গায় ২২২ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন।’ তিনি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সংগ্রাম করতে হবে। নয়তো কর্নেল তাহেরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।

ছোট ছোট দলের ভূমিকার প্রসঙ্গে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। অনেক মন্ত্রীদের গায়ে কাদা লেগেছে কিন্তু তাদের গায়ে কাদা লাগেনি।
সারা বিশ্বেই এখন ডানপন্থী রাজনীতি চলছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কর্নেল তাহেরের ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, মানব সভ্যতার বেঁচে থাকতে হলে বর্তমান অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। কর্নেল তাহেরের আদর্শ অনুসরণ করার কথা বলেন।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনি, ধর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটা হচ্ছে এখনকার বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যত উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু এসব তার উল্টোটা বলে। তিনি ১৪ দলের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা ব্যাংকসহ আর্থিক খাত লুটপাট করে খাচ্ছে, যারা দুর্নীতি করছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত, সবকিছুকে সাদা চোখে দেখলে হবে না। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলতে হবে এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে।’

আলোচনা সভায় জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মীর হোসেন আক্তারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, জাসদের নেতা নুরুল আক্তার, নাদের চৌধুরী প্রমুখ।