রাঙামাটির দুর্গম গ্রামে ডায়রিয়ায় ২ জনের মৃত্যু, আতঙ্ক

রাঙামাটির সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের দুর্গম বসন্ত পাংখোয়াপাড়ায় ডায়রিয়ায় ১০ দিনের ব্যবধানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে লোকজন বিভিন্ন স্থানে সরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাড়াবাসী। কাল সোমবার একটি চিকিৎসা দলের পাংখোয়াপাড়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতেই সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের বসন্ত পাংখোয়াপাড়ায় ডায়রিয়া দেখা দেয়। এলাকাটি জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী। প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়েছেন পাড়াবাসী। তারপরও ভালো না হওয়ায় গ্রামের বৈদ্যদের কাছে চিকিৎসা নেন অনেকে। পরে ১০ জুলাই অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রিন জাও পাংখোয়া (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী ভানরোকিম পাংখোয়াকে (৩৮) রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মারা যান ভানরোকিম পাংখোয়া। এই মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে ভয়ে বসন্ত পাংখোয়াপাড়ার অধিকাংশ লোক অন্যত্র চলে যায়। খবর পেয়ে ১১ জুলাই রাঙামাটি সদর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি চিকিৎসা দল পাংখোয়াপাড়া যায়। তারা ৮ জন ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেয়। তবে সে সময় ডায়রিয়া–আতঙ্কে বেশ কিছু মানুষ পাড়ার বাইরে ছিল। এরপর অবস্থা কিছু উন্নতি হলে পাড়ার অন্যত্র চলে যাওয়া বেশ কিছু মানুষ ফিরে আসে। এর মধ্যে ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে লাল লম ওম পাংখোয়াকে (১৯) জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হচ্ছিল। জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগিছড়া বাজারের নৌঘাটে পৌঁছালে লাল লম ওম পাংখোয়া মারা যান। ১০ দিনের ব্যবধানে একই গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা যাওয়ার পর লোকজনের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্তমানে আতঙ্কিত লোকজন গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জুমঘরে আশ্রয় নিয়েছে। পাড়ার একমাত্র বসন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি লোকজন চলে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার ৩৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

বসন্ত পাংখোয়াপাড়ার মৌজাপ্রধান (হেডম্যান) সিয়ালজল পাওখোয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পাড়াটি ৩০০ বছরের পুরোনো। একসময় কয়েক শ পরিবার নিয়ে বসবাস করেছিলাম। এখন মাত্র ২৯ পরিবারে ১৬০ জন মানুষ নিয়ে বসবাস। যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ ও চিকিৎসাবঞ্চিত এ পাড়ার মানুষ। জুলাই মাসের শুরুতে গ্রামে (পাড়ায়) ডায়রিয়া দেখা দেয়। এতে অনেকে ওষুধ খেয়েছে। আর অনেকে বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা করেছে। পাড়ায় যখন ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ে তখন কয়েকজন বৈদ্য বলেন, পাড়া থেকে অন্যত্র না গেলে আরও মানুষ মারা যাবে। এতে আরও মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পাড়ার মধ্যে মাত্র ১০–১২ জন মানুষ অবস্থান করছে।’

বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা বলেন, নতুন আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাড়ার লোকজনকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য ও সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বসন্ত পাংখোয়াপাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে চিকিৎসা দল পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার পর পাড়ার লোকজনকে সুস্থ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আবারও একজন আক্রান্ত হয়েছে শুনেছি। আরও আক্রান্ত রোগী আছেন কি না, আগামীকাল একটি চিকিৎসা দল পাঠানো হবে।’