ছোট্ট আয়েশার ধর্ষক-হত্যাকারীর বিচার চেয়ে মায়ের কান্না

মেয়ে আয়েশার ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মা রাজিয়া সুলতানার অবস্থান। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঢাকা, ২১ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম
মেয়ে আয়েশার ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মা রাজিয়া সুলতানার অবস্থান। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঢাকা, ২১ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম

মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের এক বস্তিতে থাকত কন্যাশিশু আয়েশা মনি (২)। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যেতেন। এই সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনে গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্যান্য দিনের মতো চলতি বছরের ৫ জানুয়ারিও বিকেলে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশের চারতলা একটি ভবনের সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আয়েশার বাবা মো. ইদ্রিস ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। আয়েশার হত্যাকাণ্ডের আগে বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করতেন মা রাজিয়া সুলতানা। তবে এখন আর করেন না। তাঁদের তিন মেয়ের মধ্যে আয়েশা ছিল দ্বিতীয়।

শিশু আয়েশা
শিশু আয়েশা

শিশুকন্যা আয়েশা মনিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে—এই অভিযোগে থানায় মামলা হয়। মামলা এখন তদন্ত পর্যায়ে আছে। মামলায় অভিযুক্ত নাহিদ হোসেন শিশুটিকে ধর্ষণের পর চারতলা বাড়ির তিনতলা থেকে তাকে নিচে ফেলে হত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু আসামিপক্ষ প্রভাবশালী, তাই বিচার পাবেন না—এমন আশঙ্কায় আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিশুটির ছবি নিয়ে ধর্ষক ও হত্যাকারীর শাস্তির দাবিতে অবস্থান করেন শিশুটির মা রাজিয়া সুলতানা। তাঁর অভিযোগ, আয়েশাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বিচারে কেবল পান নানা আশ্বাস।

হত্যা ও ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত নাহিদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি গেন্ডারিয়া থানা ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। ছবি: আবদুস সালাম
হত্যা ও ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত নাহিদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি গেন্ডারিয়া থানা ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। ছবি: আবদুস সালাম

৭ জানুয়ারি শিশুটির বাবা মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। পরে মামলাটি থানা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরিত হয়।

আজ প্রেসক্লাবের সামনে রাজিয়া বলছিলেন, ‘ওরা অনেক প্রভাবশালী। সব জায়গায় টাকা খাওয়াইছে। আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটারে ধর্ষণ কইরা মাইরা ফেলল, তবু বিচার পাইলাম না।’ রাজিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার বাচ্চাটারে জুরাইন গোরস্থানে দাফন করার দুই দিন পরই পুলিশ নাহিদরে ধইরা ফেলে। গেন্ডারিয়ার নেতারা সবাই বলছিল, আমরা বিচার পামু। কিন্তু এখনো তো বিচার পাইলাম না। নাহিদগো অনেক টাকা, ওগো লগে নেতাগো ভালো সম্পর্ক। আমরা গরিব বইলা কেউ আমাগো পাশে নাই।’