'ছেলেধরা' গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় ‘ছেলেধরা’ আতঙ্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। মেরুং এলাকার পাঁচটি বিদ্যালয় থেকে গতকাল রোববার সকালে শিক্ষার্থীরা চলে যায়।

এ খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সেনাবাহিনীর একটি দল বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানায়। শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক মুঠোফোন নম্বর দিয়ে আসেন ইউএনও।

গতকাল দুপুরে উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মেরুং উচ্চবিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বাইরে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অভিভাবকেরা জানান, তাঁরা সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে নিতে এসেছেন।

জালবান্দা গ্রাম থেকে আসা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুপর্ণা চাকমার মা মিতালি চাকমা বলেন, ‘মিজিলিক (ছেলেধরা) বের হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তাই বিদ্যালয় থেকে সন্তানদের নিতে এসেছি।’

লম্বাছড়া গ্রামের তপন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার মেয়ে তপতী ত্রিপুরা এ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গ্রামের অন্য ছেলেমেয়েরা বাড়িতে চলে গেছে। তাই আমার মেয়েকে নিতে এসেছি।’

অঙ্গদা মাস্টারপাড়া গ্রামের সুদর্শী চাকমাসহ অন্য অভিভাবকেরা একই কথা বলেন।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিধর চাকমা, প্রশান্ত চাকমা, নবম শ্রেণির ডায়না চাকমা, সুনন্দা চাকমা ও অষ্টম শ্রেণির কোহেলী চাকমা জানান, ছেলেধরা আতঙ্কে তাদের সহপাঠীরা বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে।

মেরুং উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষগুলোয় ঢুকে ইউএনও, ওসি, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ও স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হতে এবং গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানান।

মেরুং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ছেলেধরা গুজবে গতকাল সকালে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। বিদ্যালয়ের আড়াই শ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

উত্তর রেংকার্যা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উষা আলো চাকমা বলেন, কাল বেলা ১১টায় ছেলেধরা আসছে বলে বিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে।

চংড়াছড়ি এসডিপি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ বলেন, সকালে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা গুজবের কারণে বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে।

এ ব্যাপারে দীঘিনালা থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেধরা গুজবের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়গুলোর আশপাশে পুলিশের টহল পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোয় তিনি নিজে গিয়েও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান।

ইউএনও মোহাম্মদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেধরার গুজবটি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি, ওসি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে এসেছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে আমরা গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অভিভাবকসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’