ভেটেরিনারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা নেই

অসুস্থ পশুর অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের ভেটেরিনারি হাসপাতালে।  ছবি: প্রথম আলো
অসুস্থ পশুর অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের ভেটেরিনারি হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে থাকে বিড়ালটি। কোনোভাবে চোখে আঘাত পেয়েছে সে। ফোলা চোখ নিয়ে হলময় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিড়ালটি। পরে হলের দুই শিক্ষার্থী চিকিৎসার জন্য বিড়ালটিকে নিয়ে যান পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে। চিকিৎসক বিড়ালের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে একটি ইনজেকশন দেন।

শিক্ষার্থী রাফি আস সাদেক ও কামরুল হাসান চেয়েছিলেন বিড়ালটিকে হাসপাতালে রেখে আসতে। কারণ, হলে শুশ্রূষার তেমন সুযোগ নেই। তবে চিকিৎসকেরা জানালেন, হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ নেই। পরে বিড়ালটিকে হলে ফেরত নেন শিক্ষার্থীরা।

রাফি আস সাদেক বলেন, হলের বিড়ালটাকে দেখে রাখার কেউ নেই। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানোর জন্য কাছে পাওয়া যাবে না। তাই বিড়ালটিকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে পারলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠত। চিকিৎসক বিড়ালের জন্য চোখের ড্রপ ও প্যারাসিটামল লিখে দিয়েছিলেন। তা–ও হাসপাতালে তা পাওয়া যায়নি।

ভেটেরিনারি হাসপাতালে আনা অধিকাংশ পশু–পাখিই পোষা। মালিকেরা নিবিড় সেবার জন্য সেগুলোকে হাপাতালে রাখতে চান। কিন্তু সেই সুযোগ না থাকায় বাড়ি নিয়ে যেত হয়। অন্যদিকে নিজেরা যথাযথ শুশ্রূষা দিতে পারেন না।

পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দীন রোডের ভেটেরিনারি হাসপাতালটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত। হাসপাতালটির প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ফরহাদুল আলম জানান, ১৯২০ সালে নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ঘোড়ার চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে এই হাসপাতাল চালু হয়। এই চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির জন্য তিনি ১৯১৮ সালে ৩ দশমিক ৪ একর জায়গা বরাদ্দ দেন। বর্তমানে এই জায়গার মধ্যেই কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল ছাড়াও জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, রোগনির্ণয় কেন্দ্র এবং ওষুধ সংরক্ষণাগার আছে।

সম্প্রতি হাসপাতালের প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকার পর ভবনটির কাছে গেলে উৎকট গন্ধ আসে। পশু-পাখির চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পশম কাটা হয় বলে পুরো হাসপাতালজুড়েই এই দুর্গন্ধ। চিকিৎসকেরা বলেন, সকালে একবার হাসপাতাল পরিষ্কার করা হয়। তবে সারা দিনে আর পরিষ্কার না করায় দুপুরে পর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

লালবাগের মো. জহির আগামী ঈদুল আজহার সময় বিক্রির উদ্দেশ্যে দুটি ছাগল পালছেন। একটির পাতলা পায়খানা হওয়ার পর ২৫ জুন এই পশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জহির ছাগলটি রেখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে ব্যবস্থা না থাকায় ওষুধ নিয়ে তাঁকে ফিরে যেতে হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় দুদিন পরে ছাগল নিয়ে তাঁকে আবার হাসপাতালে আসতে হয়। জহির বলেন, ভর্তির ব্যবস্থা না থাকায় বারবার আনা–নেওয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বেড়াল, কবুতর অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে ৫১ হাজার ৫৭১টি, এপ্রিল মাসে ৫৩ হাজার ৩৫১টি, মে মাসে ৩৯ হাজার ৯৪৮টি প্রাণীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এখানে সব প্রাণীর প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে শল্যচিকিৎসা, পশুর ময়নাতদন্ত, এক্স-রে, কুকুর-বিড়াল ও অন্যান্য পশুর টিকাদান, আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়।

এ হাসপাতালে পশুপাখির আলট্রাসনোগ্রাম করার একটি, এক্স-রে করার দুটি যন্ত্র আছে। তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ আছে। নিচতলার জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষটি প্রায়ই নোংরা হয়ে থাকে। হাসপাতালে বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসক রয়েছেন। রেডিওলজিস্ট ও অবেদনবিদের পদ খালি আছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

মূল হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশের কয়েকটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। হাসপাতাল ভবনটির সামনে একটি টিনশেড ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এর টিন ভেঙেচুরে গেছে। ভেতরে পরিত্যক্ত কিছু আসবাব ও পশুপাখি রাখার খাঁচা দেখা যায়। বৃষ্টির পানি ছাড়াও ভেতরে আবর্জনা জমে দুর্গন্ধময় হয়ে রয়েছে।

হাসপাতালের অতিরিক্ত ভেটেরিনারি কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৫ সালে তৈরি করা হাসপাতালটির মূল তিনতলা ভবনটি ছাড়া এখানে পশুর চিকিৎসার জন্য আর কোনো ভবন নেই। এ ছাড়া দেশের কোথাও কোনো পশুপাখির অসুখ মহামারি আকার ধারণ করলে সেখানে যান এখানকার চিকিৎসকেরা। আর ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করার সুযোগ এখান থেকে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা মো. ফরহাদুল আলম বলেন, এ হাসপাতালে প্রাণীদের রেখে চিকিৎসা করানোর জন্য ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া ওষুধ ও চিকিৎসকের স্বল্পতাও আছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ হাসপাতালের সংস্কার করা হলে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রাণীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে।