সারা দেশের ঐক্যকে গুরুত্ব দিতে চাই: ড. কামাল

গণফোরামের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২২ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার
গণফোরামের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২২ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে এ জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সারা দেশের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিতে চান। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একে অন্যকে দোষারোপ না করে সমস্যা চিহ্নিত করার কথা বলেন এই বর্ষীয়ান আইনজীবী।

আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল এসব কথা বলেন। এ সময় দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানা তিনি। বন্যা পরিস্থিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাঠে না থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘ওইটা তো একটা ইলেকশনকে কেন্দ্র করে হয়েছিল। এই বিষয়ে তো আমি মনে করি ঐক্যফ্রন্ট না, আসল ঐক্য, জনগণের ঐক্য করা দরকার। কয়েকটা দলের ঐক্য না, সারা দেশের ঐক্যকে আমি বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।’

ঐক্যফ্রন্টের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে জোটটির আহ্বায়ক বলেন, ‘মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ঐক্যফ্রন্ট হয়েছিল। সে মূল লক্ষ্য তো আমাদের থাকবেই। ওটা ইলেকশনের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ ছিল। এখন এই ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে ঐক্য গড়তে হবে।’

বন্যা পরিস্থিতিতে দোষারোপের চেয়ে কারণগুলো চিহ্নিত করা দরকার, যেখান থেকে কোথায় ঘাটতি তা বেরিয়ে আসবে বলে জানান কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দলীয় সংকীর্ণতা চলে আসে, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করলে তখন সমস্যা সমাধানের চেয়ে এটাই চলতে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, জনগণকে সচেতন করা ও সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।

দেশে কার্যকর গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, দেশ শাসন করতে নাগরিকদের ভূমিকা থাকে। সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও ভূমিকা পালন করতে হয়। এককভাবে সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব না।

বন্যার প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে বসা দরকার। সেটা কি হয়েছে? দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় করা দরকার। তথ্য এক জায়গায় এনে মূল্যায়ন করা।’

সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন মনে করেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই একটি জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য মনে করি বন্যার জন্য।’

কামাল হোসেন বলেন, বন্যা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বন্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। বন্যার শিকার থেকে বাঁচতে ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দেশে ঐকমত্য গড়ে তোলার কথা বলেন গণফোরাম সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ। গণফোরামের বক্তব্যে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলা হয়, পর্যাপ্ত ত্রাণ এখনো বন্যাকবলিত মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেক বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয়নি—এ অভিযোগ করে বলা হয়, বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে লুটপাট হয়েছে।

আবু সাইয়িদ বলেন, ১৭ জুলাই থেকে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমসা আ আমিন কুড়িগ্রামে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

গণফোরাম বন্যা পরিস্থিতে বেশ কিছু দাবি জানায়। তা হচ্ছে খাদ্য, জরুরি ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম। জবাবদিহির ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পানি ও নদী ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহসীন রশীদ প্রমুখ।