তাসলিমাকে পিটিয়ে হত্যা: এক আসামির স্বীকারোক্তি, তিনজন রিমান্ডে

তাসলিমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আনা হয়। ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার
তাসলিমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আনা হয়। ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এক আসামি। একই মামলায় গ্রেপ্তার অন্য তিন আসামির চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তিন আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। হত্যার দায় স্বীকারকারী আসামির নাম জাফর হোসেন (১৮)। রাজধানীর খিলক্ষেতের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন জাফর। রিমান্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন শাহিন (৩১), বাচ্চু মিয়া (২৮) ও বাপ্পি (২১)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাসলিমাকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি জাফর। এই হত্যাকাণ্ডে আরও অনেকেই জড়িত আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এসআই সোহরাব বলেন, তাসলিমাকে হত্যার আগে কারা গুজব ছড়িয়েছিল, তাদের খুঁজে বের করার জোর চেষ্টা চলছে।

বাড্ডা থানা-পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, গত শনিবার সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা বেগম। তাঁর দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের গেটে কয়েকজন নারী তাসলিমার নাম-পরিচয় জানতে চান। পরে লোকজন তাসলিমাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে কয়েক শ লোক একত্র হয়ে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে উদ্ধার করে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তাসলিমার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচ শ মানুষকে আসামি করে মামলা করেন।

তাসলিমাকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন আসামি জাফর। জবানবন্দি শেষে তাঁকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: আসাদুজ্জামান
তাসলিমাকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন আসামি জাফর। জবানবন্দি শেষে তাঁকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: আসাদুজ্জামান

মামলায় গ্রেপ্তার অপর তিন আসামিকে আজ আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে বাড্ডা থানা-পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ডে তিন আসামি জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। সহযোগী আসামিদের নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তাঁরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা জানার জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রত্যেক আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নিহত তাসলিমার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যারা গুজব ছড়িয়ে তাঁর নিরীহ খালাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। কারা গুজব ছড়াচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। আর যেন এমন নৃশংস ঘটনা না ঘটে।