ছেলেধরা সন্দেহ মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। মাদারীপুর, ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। মাদারীপুর, ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে ছেলেধরা সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করেছে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। এ কারণে তাঁর নাম বা পরিচয় জানা যায়নি। একেক সময় এক রকম কথা বলেন। তাঁর বয়স প্রায় ৬০ বছর। তিনি শ্রীনদী এলাকায় জোবায়ের মাদবর নামে এক কৃষকের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে থাকতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈরাগীর বাজারে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এক নারী বাজারে ঘুরতে থাকেন। বাজারের লোকজন তাঁকে দেখে পরিচয় জানতে চান। এ সময় তিনি ঠিকমতো পরিচয় দিতে পারেননি। এতে ওই নারীকে ছেলেধরা বলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ওই নারীকে গলাকাটা বলে ধাওয়া করেন। পরে তাঁরাই ওই নারীকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন।

অন্যদিকে ওই নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন একজন নারীকে গলাকাটা (ছেলেধরা) বলে কিল ঘুষি দিচ্ছেন উৎসুক জনতা। কয়েকজন লোক তাঁদের মারধর করতে নিষেধ করছেন। স্থানীয় কিছু যুবক ওই নারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা জানতে বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন। ভারসাম্যহীন ওই নারী চুপ থাকায় তাঁরা তাঁকে চড়-থাপ্পড় দেন।

ধুরাইল ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজার এলাকায় বাসিন্দা বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, ‘গলাকাটা ধরছে, এমন খবর শুনে বাজারে গিয়ে দেখি এই বয়স্ক মহিলাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেল। সবাই ওই নারীর সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিল। পরে পুলিশ এসে ওই নারীকে ধরে নিয়ে যায়।’

শ্রীনদী তদন্তকেন্দ্রে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাফুজ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমাদের কাছে এনে রেখেছি। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। পথে পথে ঘুরে বেড়ান। তাঁর নাম-ঠিকানা জানতে পারিনি। শুধু জেনেছি তিনি শ্রীনদী বাজারে এক কৃষকের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকেন।’

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর আশ্রয়দাতা জোবায়ের মাদবর মুঠোফোনে বলেন, ‘চার বছর আগে থেকেই তিনি আমার বাসায় আশ্রয় নেন। তাঁকে নাম ঠিকানা বললে কাঁদেন, কিছুই বলতে পারেন না। তাই আমরা কখনো জোর করতাম না। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা তাঁকে থাকতে দিয়েছিলাম। তিন বেলা খেতে দিতাম। আজ সকাল থেকে তাঁকে বাড়িতে দেখি না। পরে শুনি হাঁটতে হাঁটতে নাকি তিনি পাশের গ্রামের বৈরাগীর বাজারে চলে গেছেন।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘ওই নারীকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ সঠিক সময়মতো না গেলে হয়তো একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত। ভবিষ্যতে যাতে কেউ ছেলেধরা সন্দেহে হামলার শিকার না হয়, সে বিষয়ে আমাদের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।’