রেসিং কার প্রতিযোগিতায় দুটি পুরস্কার পেল বাংলাদেশ

এবারের ২১তম আসরে ৩০টি দেশের প্রায় ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ দলটির নাম ছিল ‘টিম প্রাইমাস’। ছবি: সংগৃহীত
এবারের ২১তম আসরে ৩০টি দেশের প্রায় ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ দলটির নাম ছিল ‘টিম প্রাইমাস’। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক রেসিং কার প্রতিযোগিতা ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট’-এ প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে দুটি পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ দল। যুক্তরাজ্যের নর্থ হ্যামটনশায়ারের সিলভার স্টোন সার্কিটে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ‘ফর্মুলা স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘বেস্ট নিউ কামার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে বাংলাদেশ।

১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় ফর্মুলা স্টুডেন্ট রেসিং কার প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর এ আয়োজন করে বৈশ্বিক যন্ত্র প্রকৌশলীদের সংস্থা (আইমেকই)। এবারের ২১তম আসরে ৩০টি দেশের প্রায় ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ দলটির নাম ছিল ‘টিম প্রাইমাস’।

সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ দলটির দলনেতা ও আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী অ্যান্টনি বিধান বিশ্বাসের সঙ্গে। অ্যান্টনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অটোমোবাইল খাতে ব্যয়বহুল ও উচ্চ কারিগরিবিষয়ক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সাহসিকতা ও উদ্যোগ দেখে আইমেকই বাংলাদেশকে দুটি অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। মাত্র দুই বছরের প্রস্তুতিতে এবং কারিগরিবিষয়ক প্রতিবন্ধকতা এত বড় একটি প্রতিযোগিতায় আমরা অংশ নিয়েছি বলে সবাই আমাদের প্রশংসা করেছে। এই সফর ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমরা অটোমোবাইল প্রকৌশলীতে অনেক কিছু শিখেছি।’

দলটির ২৯ সদস্যের মধ্যে ২৭ জনই আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাঁরা ফর্মুলা ওয়ান রেসের আদলে ৬০০ সিসির (সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি) একটি রেসিং কার বানান। গাড়িটির নাম তাঁরা দেন ‘এমএইচকে-১৯’।

অ্যান্টনি বিধান বিশ্বাস বলেন, এর আগের ২০টি আসরে বাংলাদেশ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। ঢাকার ধোলাইখাল, সিদ্দিকবাজার ও ভারত থেকে ইঞ্জিন আমদানি করে গাড়িটি বানিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশের ‘টিম প্রাইমাস’ দলটি ১৫ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। ১৮ জুলাই প্রতিযোগিতার প্রথম দিনে সিলভার স্টোন সার্কিটে গাড়িটি প্রদর্শিত হয়। এরপর পরীক্ষামূলক চালনার ধাপে (স্ক্রুটিনাইজ) কিছু শর্ত পূরণ হয়নি বলে সার্কিটের মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ দলটির উদ্যম, কারিগরি দক্ষতা, পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অংশ নেওয়ায় পুরস্কৃত করে আইমেকই।

বাংলাদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ দলটির সদস্য আহ্‌ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ম্যাক জেরাল্ড রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে রওনা দেওয়ার আগে আমরা একবার মাত্র পরীক্ষামূলক চালানোর (টেস্ট ড্রাইভ) সুযোগ পেয়েছিলাম। কারিগরি দিকে কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে সার্কিটের মূল প্রতিযোগিতায় গাড়িটি আমরা চালাতে পারিনি। তবে আইমেকই কর্তৃপক্ষসহ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো আমাদের গাড়িটি দেখে প্রশংসা করেছে। তারা বলেছে, এত অল্প সময়ে এত বড় একটি প্রতিযোগিতায় আসাটা অনেক সাহস ও গর্বের বিষয়।’

ম্যাক জেরাল্ড রোজারিও জানান, ২০১৭ সাল থেকে তাঁরা আইমেকইতে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস থেকে শেখা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ বছরের জুন মাসের শুরুতেই তাঁরা গাড়িটি বানান। সব শেষে বিদেশ থেকে ইঞ্জিন আসার পর জুলাই মাসে প্রতিযোগিতায় রওনা দেওয়ার এক দিন আগে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করেন।

বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল খাতকে প্রযুক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করতে ১৯৯৮ সাল থেকে আইমেকই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য প্রকৌশল নিয়ে পড়া তরুণ সৃষ্টিশীল শিক্ষার্থীদের অটোমোবাইল খাতে ক্যারিয়ার গঠন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিযোগিতার আরেকটি লক্ষ্য দ্রুতগতির জ্বালানিসাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করা। এ বছর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালির ইউনিভার্সিটি অব মিলানের দল মরে মডেনা রেসিং দল।