বগুড়ায় বন্যার ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

বগুড়ায় এবারের বন্যায় সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

আজ সোমবার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম এবং সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের উপস্থিতি বিশেষ এই সভায় সোমবার পর্যন্ত বন্যার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি উপস্থাপন করা হয়।
বগুড়া জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১২৬ কোটি টাকার সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে কৃষকের।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ২৩ হাজার ৩০ হেক্টর পাট, আউশ, মরিচ, আখ, আমনের বীজতলা, শাকসবজিসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার পানিতে পাট ভেসে গেছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির। এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৬৩৫ কৃষক পরিবারের সব মিলিয়ে ১২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বাঙালি নদীর পানিতে নতুন নতুন এলাকায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। এবার সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এখানে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গেল বছর বন্যায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৭ হাজার ৯৭৩ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছিল। এতে ৮৩ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছরে জেলায় বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২১৬ কোটি টাকা,২০১৭ সালে বন্যায় ৪২৫ কোটি এবং ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৪৯ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট ৩১৪টি জলাভূমির ৯৬ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ ছাড়া অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে খামারি ও চাষিদের ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের বন্যায় ১০০ পুকুরের মাছ ভেসে গেলে খামারেদের ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বন্যায় এলজিইডির ২১৪ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ও ১৫টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৬৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
২০১৭ সালের বন্যায় সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা সড়ক আংশিক, খোয়া বিছানো দুই কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ ও ৭ কিলোমিটার সড়ক আংশিক, ৭১ কিলোমিটার কাঁচা সড়কের সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতে প্রয়োজন প্রায় ১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সরকারি হিসাবে, ৩৩৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, সাড়ে ১৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ১০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার।
১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১০টি গবাদিপশু ভেসে গেছে। ৩২০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ হাজার ৬২৫ একর চারণভূমি নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে খামারিদের।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বলেন, বন্যায় সরকারি হিসাবে ২০৫টি আধা পাকা বাড়ি সম্পূর্ণ, ৯০৫টি বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ সম্ভব না হলেও অন্তত ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাড়িঘর বিধস্ত হয়ে ২০১৭ সালে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
জেলা দুর্ভোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,২০১৬ সালের বন্যায় ৭৮ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার সম্পদহানি হয়েছে। এর মধ্যে ফসলের ক্ষতি ৪৯ কোটি, বাড়িঘরের ক্ষতি ১ কোটি ৭৩ লাখ, রাস্তাঘাটের ক্ষতি ৫ কোটি ৭৫ লাখ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ৯৭ লাখ, মৎস্য চাষিদের ক্ষতি ১ কোটি ১৫ লাখ এবং টিউবওয়েল ও পায়খানার ক্ষতি ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার।
২০১৫ সালের বন্যায় ৭৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ বছর শুধু ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি টাকার।
সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে ২০১৪ সালে। এ বছরের বন্যায় ৩৯৪ গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সরকারি হিসাবে ৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সম্পদহানি ও ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ বছর শুধু ফসলহানি হয়েছে ১৫ কোটি টাকার। এছাড়া ১৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে নিমর্জিত হওয়ায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়।