'চাঁদপুরে মাকে হারিয়েছি এখানে আর ফিরব না'

চাঁদপুর শহরে স্কুলশিক্ষক জয়ন্তী চক্রবর্তীকে খুনের ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুরে তাঁরা স্বামী অলক গোস্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে চাঁদপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

জয়ন্তী চক্রবর্তী চাঁদপুর ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাঁর স্বামী অলক গোস্বামী চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উচ্চমান সহকারী পদ থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাবার বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার উল্লাসর গ্রামে। স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কমলদহ গ্রামে।

গতকাল বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তাঁর ছেলে পার্থ সারথী বলে, ‘আমরা মায়ের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আমরা আর চাঁদপুরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই না। কারণ চাঁদপুর আমার মাকে কেড়ে নিয়েছে। তবে কী কারণে কেন আমার মাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, জানি না।’ পার্থ সারথী আরও বলে, ‘বাসায় চুরি-ডাকাতির উদ্দেশ্যে গেলে টাকাপয়সা ও মালামাল নিয়ে যেত। সবকিছুই ঠিক আছে। শুধু মাকে খুন করা হয়েছে। চাঁদপুরে এসে আমরা মাকে হারিয়েছি। আমরা আর এই শহরে ফিরব না। কোনো দিন না।’

>

চাঁদপুরে স্কুলশিক্ষক খুন
জয়ন্তী চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে
মরদেহ তাঁর স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কমলদহ গ্রামে নেওয়া হয়েছে

পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপরে শহরের ষোলঘর এলাকায় পাউবোর স্টাফ কোয়ার্টারের দ্বিতীয়তলায় জয়ন্তী চক্রবর্তীকে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করে। জয়ন্তী বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে রোববার বাসায় একাই ছিলেন। তাঁর স্বামী সকালবেলায় ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন।

শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

জয়ন্তীর হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি মানববন্ধনের আয়োজন করে। কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিনয় ভূষণ মজুমদার, চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল বাসার, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফররুখ আহমেদ, জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক, ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল, বিষ্ণুপুর আজিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খোদেজা বেগম, হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইসমত আরা সাফি প্রমুখ।

চাঁদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিমউদ্দিন বলেন, গতকাল বেলা দুইটার দিকে মামলা হয়েছে। উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ চক্রবর্তীকে এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবির বলেন, এখন পর্যন্ত খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। তবে পুলিশ কাজ করছে।