মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি উৎসব

জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) পরিচালিত প্রকল্প সম্প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) পরিচালিত প্রকল্প সম্প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) পরিচালিত প্রকল্প সম্প্রীতি সহিংস-উগ্রবাদ প্রতিরোধে ২৫ থেকে ২৬ জুলাই দুই দিনব্যাপী সম্প্রীতি উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছে। গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে সেলিব্রেটি হল, বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স সেন্টারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

‘সম্প্রীতি উৎসব–২০১৯’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রীতির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার মান্নান, উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান ও ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।

উৎসবের প্রথম দিন প্রদর্শনী, অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আয়োজনের অংশ হিসেবে বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা আলাদা গোলটেবিল আলোচনা হবে। দ্বিতীয় দিনেও প্রদর্শনী, অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠান ও কনসার্টের পাশাপাশি সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সাংবাদিকদের মধ্যে আলাদা আলাদা গোলটেবিল আলোচনা হবে। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

সম্মেলনে বক্তারা জানান, সম্প্রীতি প্রকল্প তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চায়। যাতে তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে উগ্রবাদে প্ররোচিত না হয়। দেশের তরুণেরা যাতে যৌক্তিক বিবেচনা করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার মান্নান বলেন, এমজেএফ বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। এটি ২০০২ সাল থেকে মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

এমজেএফের সব কর্মসূচি বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (২০১২), সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০–এর সঙ্গে ধারণা ও কৌশলগতভাবে সম্পর্কযুক্ত।

সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে প্রকল্পের কাজ বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা, পরমত সহিষ্ণুতা, ভিন্নতা গ্রহণের মানসিকতা ও মননশীলতা চর্চার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। এই কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে মানবিক সভ্যতার বিজয়ের কথা উচ্চারণ করতে চাই। আমরা বলতে চাই, এই সংকট, এই শঙ্কার বিপরীতে একটাই উত্তর—সম্প্রীতি। একমাত্র সম্প্রীতিই পারে মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন ঘটিয়ে স্বপ্নের সেই মানবিক সভ্যতাকে বাস্তবে রূপ দিতে।’

সম্প্রীতি প্রকল্প খেলাধুলা, সাইবার সচেতনতা, উদ্যোক্তা কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণ, শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে তরুণদের মানবিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলতে কাজ করছে। সম্প্রীতি প্রকল্প ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যে কাজগুলো করছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো:

উগ্রবাদ সম্পর্কে তরুণদের ধারণা ও তা প্রতিরোধে করণীয় জানতে বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি জেলার তিন হাজার তরুণের ওপর জরিপ পরিচালনা

৩৮ সংগঠনকে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করা। যার মধ্যে রয়েছে ইয়ুথ গ্রুপ, থিয়েটার গ্রুপ, ডিবেটিং সংস্থা, ফিল্ম মেকিং সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ক্লাব, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সফটওয়্যার ও সাইবার সেফটিভিত্তিক সংগঠন এবং এনজিও।

২৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার (ফাজিল ও কামিল) প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থীকে সরাসরিভাবে সৃজনশীলতা ও মূল্যবোধ চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮৯ হাজার তরুণের মধ্যে সহিংস উগ্রবাদ এবং সাইবার অপরাধ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।

ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রতিরোধে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ডকে সম্পৃক্তকরণ এবং আন্তধর্মীয় সংলাপ আয়োজন।

সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন ও ওয়েবসাইটভিত্তিক প্রচারণা এবং প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম আয়োজন।

ছয়টি জেলার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে প্রচারণা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রভৃতি।