রওশনের বিবৃতিটি কাঁচা, বিশ্বাসযোগ্য নয়: কাদের

জি এম কাদের। ফাইল ছবি
জি এম কাদের। ফাইল ছবি

দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে মানেন না বলে জতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ‘বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন কাদের। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। নেতৃত্বের প্রশ্নে জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

রওশনের হাতে লেখা একটি বিবৃতির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘বিবৃতিটি হাতে লেখা ও কাঁচা। এটা বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য নয়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনায় জি এম কাদের এ কথা বলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যানের উপ প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী।

এর আগে জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দেন জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন।

অবশ্য গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ‘বিবৃতিটি হাতে লেখা ও কাঁচা। এটা বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য নয়।’ এটা বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছি বিবৃতিটি (রওশন এরশাদের) যেভাবে এসেছে তাতে আমার মনে হয়েছে এটি ওনার (রওশন) পক্ষ থেকে নাও আসতে পারে। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে তাঁর জানা ছিল। এটি তিনি প্রত্যাহার করতে বলবেন বলে জানান।

আর ওই বিবৃতির মাধ্যমে দলটির ভেতরের দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশিত হয়ে উঠেছে। যদিও গত ১৮ জুলাই কাদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সর্বসম্মতিক্রমেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর দলটির মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদ নেই বলেই দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু রওশনের বিবৃতিতে ‘বিভেদ’ না থাকার দাবিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

১৪ জুলাই এরশাদ মারা যান। তবে এর আগে গত মে মাসে তিনি তাঁর ছোটভাই জি এম কাদেরকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেন। ছোট ভাইকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই অখুশি হন। তবে এ নিয়ে আর বড় ধরনের কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়নি। এরশাদের মৃত্যু পর্যন্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন কাদের।

জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে রওশনপন্থী একটি অংশ জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় আগে থেকেই। গতকাল দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রওশন বলেন, সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন, জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, এ নিয়ে আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, জাপার অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। বিজ্ঞপ্তিতে দলের নয়জন নেতার নামও উল্লেখ করা হয়। তাঁরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম, সেলিম ওসমান, নাসরিন জাহান রত্না, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ ও দেলোয়ার হোসেন এবং সাংসদ রওশন আরা মান্নান ও লিয়াকত হোসেন খোকা।

আজ বিবৃতি প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের পরিবারে পিতৃতুল্য ছিলেন। সেই ভাবেই বেগম রওশন এরশাদ আমাদের মায়ের মতো।’

কাদের বলেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের নির্দেশনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। এখনো তাঁর নির্দেশনাতেই চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছি।

কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। তারা যে নামেই সম্বোধন করবে তাতে কোন সমস্যা নেই। জাতীয় পার্টিতে কাজ করাটাই আসল কথা। তিনি বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব।

জি এম কাদের বলেন, সএরশাদের মৃত্যুতে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্রদূত জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে এসে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি নরেন্দ্র মোদীর শোকবার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে এরশাদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবে।

এর আগে জি এম কাদের বনানী কার্যালয়ে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ত্রাণ ব্যবস্থাপণা পরিদর্শন করেন। কাল বুধবার দুপুরে কাদের জামালপুরের ইসলামপুরে বণ্যাদূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন।

আজ কাদেরের ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা আশরাফ উদ-দৌলা, ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান আলী, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় প্রমুখ।