একটি কক্ষে পড়েছিল ২০ জনের লাশ

হোলি আর্টিজান
হোলি আর্টিজান

গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পরদিন ২০১৬ সালের ২ জুলাই বেলা ১১ টায় ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দেবনাথ। তখন তিনি পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। অপরাধের আলামত (ক্রাইমসিন) সংগ্রহের জন্য রেস্তোরাঁর নিচতলার কক্ষে গিয়ে দেখতে পান ২০ জনের মরদেহ। কক্ষের বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে পড়েছিল। লাশে ছিল ধারালো অস্ত্র ও গুলির অসংখ্য চিহ্ন।

হোলি আর্টিজানে হামলা মামলার সাক্ষী প্রশান্ত কুমার দেবনাথ আজ মঙ্গলবার ঢাকার আদালতকে এসব কথা বলেন। এই মামলায় পুলিশ পরিদর্শক প্রশান্তসহ চারজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অপর তিন সাক্ষী হলেন, আলম চৌধুরী, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সহকারী উপপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ও কনস্টেবল মো. মোজাহার। এর মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এই মামলার ৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমান।

গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পরদিন ঘটনাস্থলে আসেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দেবনাথ। মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন। ছবি: আসাদুজ্জামান
গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পরদিন ঘটনাস্থলে আসেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দেবনাথ। মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন। ছবি: আসাদুজ্জামান

এক কক্ষে ২০ মরদেহ
এসআই প্রশান্ত কুমার দেবনাথ আদালতকে বলেন, সেদিন হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সামনের লনে প্রথমে পাঁচ জঙ্গির মরদেহ দেখেন। মরদেহের পাশে তিনি একটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি পিস্তল ও অসংখ্য গুলি দেখতে পান। পাঁচ জঙ্গির মরদেহের কাছেই পড়েছিল হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর এক শেফের মরদেহ। সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেন, ছবি তোলেন। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা মরদেহগুলো উদ্ধার করে তা সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়।

প্রশান্ত কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, চাকরিজীবনে বহু মরদেহ তিনি দেখেছেন। কিন্তু গুলশানের হোলি আর্টিজানের রেস্তোরাঁর একটি কক্ষে ২০ জনের মরদেহ দেখার বীভৎস দৃশ্য তিনি ভুলতে পারছেন না। মরদেহগুলো কক্ষের বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। রেস্তোরাঁর ওই কক্ষের আয়তন হবে তিন থেকে চার শ স্কয়ার ফিট। কক্ষ থেকে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে রেস্তোরাঁর লনের দিকেও চলে আসে। মরদেহ গুলি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, বাঁচার জন্য সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।

প্রশান্ত কুমার জানান, হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনাস্থল থেকে লম্বা দুটি ছোরা জব্দ করা হয়। এর মধ্যে রক্তমাখা একটি ছোরায় লম্বা চুল লেগেছিল—তাঁর ধারণা ওই চুল কোনো নারীর হবে। তিনি বলেন, নিহত এক নারীর শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩৫ টি কোপ তিনি দেখতে পান। গুলি করে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিরীহ লোকদের হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। কক্ষে পড়েছিল নিহতদের মোবাইলসহ নানা জিনিসপত্র। রেস্তোরাঁর নিচতলার কক্ষে চার থেকে পাঁচটা চাপাতি পাওয়া যায়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেন ২২ জনকে। হামলার আড়াই বছরের মাথায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা হয়।

এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি রাশেদ ওরফে র‍্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।