আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট বলেছেন, ‘তারা (ওয়াসা) সমস্যার সমাধান করতে পারলে ভালো। আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি। যদি তারা তা নিশ্চিত করতে পারে, তা ভালো।’ আজ বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন জোন থেকে সংগৃহীত পানির আট নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ বিষয়ে ওয়াসার বক্তব্য দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হলে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

এর আগে আদালতের আদেশ অনুসারে গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিডিডিআরবির পরীক্ষাগারে পানির নমুনা পরীক্ষা করে এক প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি ৭ জুলাই আদালতে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনের ভাষ্য, উৎসসহ ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন জোন থেকে সংগৃহীত পানির ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে। এই দূষণ রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও কমিটির সুপারিশে বলা হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত এই প্রতিবেদনের বিষয়ে হলফনামা আকারে বক্তব্য ওয়াসাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ২৪ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।

শুরুতেই ওয়াসার আইনজীবী এ এম মাছুম বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি ও বুয়েটে ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে মিরপুর ও পাতলা খান লেনে ফিকেল কলিফর্ম পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে পাতলা খান লেনের পরীক্ষার প্রতিবেদন এসেছে। তবে মিরপুরেরটা রোববার পাব। এ ছাড়া ওই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’ তিনি সময়ের আরজি জানান।

এ সময় রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আদালতের আদেশের তিন মাস পর কমিটি গঠন হয়েছে। আজ কমিটির রিপোর্টের ওপর জবাব দেওয়ার কথা ছিল। এখন তারা সময় চাইছে।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘তারা (ওয়াসা) সমস্যার সমাধান করতে পারলে ভালো। আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি। যদি তারা তা নিশ্চিত করতে পারে, তা ভালো।’ আদালত আগামী মঙ্গলবার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন।

পরে আইনজীবী এ এম মাছুম প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সুপারিশ ওয়াসা বাস্তবায়ন করেছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাতলা খান লেনের পানি পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবি ও বুয়েটে পাঠানো হয়েছিল। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী পানি ভালো।

এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর ‘অনিরাপদ পানি পান করছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে একই বছরের ১৪ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন এবং ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করতে বলেন। এরপর গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

চার সদস্যের কমিটি তিন দফা সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়, নিরীক্ষায় শনাক্ত হওয়া সরবরাহকৃত এলাকায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সমস্যাপ্রবণ এলাকায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিবারে বা খানায় পানির মান সার্বিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সব পরিবারে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।