ছোট হয়ে আসছে সুরাইয়ার পৃথিবী

সুরাইয়া
সুরাইয়া

চার পেরিয়ে পাঁচে পা দিয়েছে সুরাইয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের পৃথিবীটা আরও বড় হয়। সুরাইয়ার হয়েছে ঠিক উল্টোটা। যে বয়সে দৌড়ে–খেলে দুষ্টুমিতে বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা ছিল তার। সে বয়সে সুরাইয়া হাঁটতে পারে না। ডান চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই। পা ও হাতের শক্তিও দিন দিন কমছে।

মাগুরায় মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সুরাইয়া। গতকাল মঙ্গলবার ছিল তার জন্মদিন। যদিও এ নিয়ে কোনো আয়োজন ছিল না তার মা–বাবার। তবে গতকাল বিকেলে মাগুরার জেলা প্রশাসক আলী আকবর কেক ও কিছু উপহারসামগ্রী নিয়ে সুরাইয়ার বাড়িতে যান। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পরিবারের লোকজন কেক কেটে সুরাইয়ার জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন।

২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পেটে গুলিবিদ্ধ হন সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম। গুলিটি মায়ের গর্ভে থাকা সুরাইয়ার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে ডান চোখে আঘাত করে। ওই রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সুরাইয়ার জন্ম হয়। শিশুটির আঘাত ছিল মারাত্মক। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি সহযোগিতায় ঢাকায় ২৫ দিনের চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান তার মা–বাবা।

সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভুইয়া চা বিক্রেতা। তাঁর চোখের সামনেই মেয়েটা ধীরে ধীরে শক্তিহীন হয়ে পড়ছে। কিন্তু দরিদ্র এ বাবা তেমন কিছু করতেও পারছেন না। তিনি বলেন, চার বছর আগের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁর চাচা মোমিন ভুইয়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় মোমিন ভুঁইয়ার ছেলে রুবেল ভুঁইয়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি আজিবর শেখ সে সময়ই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তবে এখন মামলাটির বিচারকাজ চলছে খুবই ধীরে।

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা যদি স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিত, আজ ও দৌড়ে বেড়াত। অথচ ও এখন দাঁড়াতেই পারে না। ওর মাজা (কোমর) থেকে পা পর্যন্ত বল নেই। ডান হাতটাও চলে না। ডান চোখটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।’

ওই সময়ে সুরাইয়ার অস্ত্রোপচার করেছিলেন মাগুরার সার্জন শফিউর রহমান। তিনি বলেন, তার ডান হাতটা বেশ দুর্বল। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ফিজিওথেরাপি দিলে হয়তো শিশুটির অবস্থা কিছুটা উন্নতি হতে পারে।