সৈয়দপুরের বট-পুরি

সৈয়দপুরে সুস্বাদু বট–পুরির প্রতি নগরবাসীর আকর্ষণ বাড়ছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা ক্যানটিনে।  ছবি: প্রথম আলো
সৈয়দপুরে সুস্বাদু বট–পুরির প্রতি নগরবাসীর আকর্ষণ বাড়ছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা ক্যানটিনে। ছবি: প্রথম আলো

দেশের উত্তরাঞ্চলের বহুভাষাভাষী মানুষের শহর নীলফামারীর সৈয়দপুর। চার লাখ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত এ শহরে বাংলার পাশাপাশি উর্দু ভাষাও চলে। খাবারদাবারেও রয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। গরুর চাপ, শিক কাবাব, মোগলাই বিরিয়ানি, হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, পেশোয়ারি পরোটা, রুটি কাবাব, জালি কাবাব ইত্যাদি খাবারের প্রচলন আছে এ শহরে। স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি পছন্দ করেন ‘বট-পুরি’।

গরু-মহিষের বট, মানে ভুঁড়ি দিয়ে তৈরি খাবার এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ শহরে। রেস্তোরাঁগুলোতে বাড়ছে ভিড়। বিকেল হলে রেস্তোরাঁগুলোয় খরিদ্দারেরা প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বিক্রি চলে মাঝরাত পর্যন্ত।

বাঙালি-বিহারির মিশ্র এ শহরে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বট-পুরির। অন্যান্য জেলা থেকে লোকজনও আসেন বট-পুরি খেতে। এ শহরে শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁয় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি কড়াইয়ে বট (ভুঁড়ি) সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।

রেস্তোরাঁমালিকেরা বট তৈরির মূল উপকরণ গরু ও মহিষের ভুঁড়ি ও তার উচ্ছিষ্ট অংশ শহর ও তার আশপাশের কসাইখানা থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি কেজি ভুঁড়ি কেনেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। অনেক সময় পুরো ভুঁড়ি কিনে থাকেন সাত থেকে আট শ টাকায়। এ জন্য রেস্তোরাঁমালিকেরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কসাইদের আগাম টাকা দেন।

সৈয়দপুর শহরে সবচেয়ে বেশি বট-পুরি বিক্রি হয় পানহাটির গোলজার হোটেলে। এর স্বত্বাধিকারী মো. গোলজার জানান, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের হোটেলে প্রায় ৩০ কেজি বট বিক্রি হয়। ক্রেতারা পুরি দিয়ে খেতে পছন্দ করেন সুস্বাদু ওই বট। শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডে সোহেল রানা হোটেলেও বিক্রি হয় প্রচুর বট-পুরি। একইভাবে গোলাহাটের ভোলার হোটেল ও জিআরপি ক্যানটিনের বট-পুরি খেতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমান। এক প্লেট বটের দাম মাত্র ৪০ টাকা, সঙ্গে ১০ টাকার পুরি হলে দুই-তিন বন্ধু মিলেমিশে খাওয়া যায়।’

শহরের আবুল হোটেলের মালিক রানা ও বিজলী হোটেলের মালিক সাবের আলী জানান, বটের এমন চাহিদা যে অনেক সময় কসাইকে ১০-২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েও গরু-মহিষের ভুঁড়ি মেলে না।

মান্নান বাবুর্চি জানান, ওই বট সবাই রান্না করতে পারেন না। ফলে কোনো হোটেলে ভিড় বেশি, আবার কোনোটিতে খরিদ্দার যেতেই চান না। তবে বিহারি বাবুর্চিরা এসব ভালো তৈরি করতে পারেন বলে জানান তিনি। মসলা ও বাবুর্চির গুণে ওই বট এখানে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।