ছোট্ট পাঞ্জাবিটা এখন কে পরবে?

ছোট্ট মুসা মাহমুদের সঙ্গে মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত
ছোট্ট মুসা মাহমুদের সঙ্গে মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত

৪০ দিন বয়সে শিশু মুসা মাহমুদ বেগুনি পাঞ্জাবি পরবে। তাঁর সঙ্গে মিলিয়ে মুসার বাবা আসিফ মাহমুদও একই রকমের পাঞ্জাবি বানিয়েছেন। মা সানজীদা আলমের শাড়ি ও সাত বছর বয়সী মেয়ে মোবাশ্বেরা মাহমুদেরও জামাও তৈরি। ৪০ দিন বয়স পূর্ণের অনুষ্ঠান মুসা মাহমুদের নানার বাসায় ঘটা করেই হবে। কিন্তু ছেলের ৩৪দিন বয়সেই সব শেষ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মুসা সাদা কাফনে মুড়ে গেল নানার বাসায়।

ছোট্ট মুসা মাহমুদের জন্য বানানো হয় এই বেগুনি পাঞ্জাবিটি। ছবি: সংগৃহীত
ছোট্ট মুসা মাহমুদের জন্য বানানো হয় এই বেগুনি পাঞ্জাবিটি। ছবি: সংগৃহীত


গত শনিবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় ছোট্ট শিশু মুসা। মা সানজীদা আলমের আক্ষেপের শেষ নেই। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর বাসায় টেলিভিশনও দেখতেন মশারির ভেতরে বসে। এ নিয়ে অন্যরা হাসাহাসি করতেন। ছেলের যে ডেঙ্গু, তা-ই তো বুঝতে পারলেন না। বুঝবেনই বা কেমনে? কোনো লক্ষণ তো ছিল না। শিশু মুসার জন্য বানানো ছোট্ট পাঞ্জাবি এখন কে পরবে?

রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার বাসিন্দা সানজীদা আলম গতকাল মঙ্গলবার বললেন, ‘আমি বা আমার পুরো পরিবার সচেতন ছিলাম। বাসা, বাসার আশপাশ পরিষ্কার রেখেছি সব সময়। কিন্তু আশপাশের মানুষ হয়তো সচেতন ছিলেন না। ছেলেকে কখন এডিস মশা কামড়িয়েছে, তা বুঝতেই পারিনি। ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই এডিস মশা যাতে কোনোভাবেই বিস্তার লাভ করতে না পারে, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিরোধ করা ছাড়া তো বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। এখন আমরা আমাদের মেয়েকে নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি।’

সানজীদা আলম জানালেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই ছেলের জন্ম। জন্মের পর কান্না করা থেকে শুরু করে সব ছিল স্বাভাবিক। ৪০ দিন বয়স হতে চলল, তাই ছেলের সব ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্যই চিকিৎসকের চেম্বারে নেওয়া হয়। তখন ছেলের শরীর হালকা গরম (৯৯ ডিগ্রি) ছিল। ছেলেকে দেখার পর চিকিৎসক বললেন এর ওজন, উচ্চতা সব ঠিকভাবেই বাড়ছে। চিকিৎসককে শরীর হালকা গরমের কথা জানানো হলে তিনি বলেন, এই জ্বরে তেমন সমস্যা হবে না। তবে জ্বর বাড়লে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মুসা মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মুসা মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত


সানজীদা আলম বললেন, ‘চিকিৎসকের কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে ফেরার পথে আমরা পিৎজা খাই। চারজন মিলে ছবি তুলি। ওই ছবি ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি করি। তবে সেদিন রাত থেকেই জ্বর বাড়ে। শুক্রবার দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গেলাম। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানালেন, ছেলের ডেঙ্গু, খারাপ অবস্থা। ওকে বিশেষ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইএসইউ) রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। আমরা ঘুরতে লাগলাম বিভিন্ন হাসপাতালে। অবশেষে একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে পারি। ছেলে ডেঙ্গু শকে চলে গিয়েছিল, চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন আশা কম। তারপর শনিবার ছেলে মারা গেল।’

পেশায় কোরিওগ্রাফার সানজীদা আলম বললেন, ‘আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। চিকিৎসকদের বলেছিলাম, আমার শরীরের কোনো অঙ্গ লাগলে তা দিয়ে হলেও যেন ছেলেকে বাঁচান। ছেলের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় রক্তও দিলাম। কিন্তু তা আর ছেলের শরীরে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৩৪ দিন বয়সে চলে গেল।’