মনুর ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রায় আট দিন লাগাতার মনু নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কখন, কোথায় বাঁধ ভেঙে যায়—এই আতঙ্কে কেটেছে মৌলভীবাজারের মনু নদ প্রভাবিত এলাকার মানুষের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু স্থানে বাঁধের মাটি ধসের কিছু ঘটনা ছাড়া এই দফা কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ মনে করছে, মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জরুরি মেরামতের কারণে সাময়িক বন্যা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বর্ষায়ও মৌলভীবাজার জেলায় মনু নদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থান ভেঙে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে অনেক স্থান। মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকায় বাঁধ ভেঙে শহরের পশ্চিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ বছর বর্ষা চলে এলেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো স্থায়ী মেরামতের বরাদ্দ মেলেনি। এতে মনু নদের দুই তীরের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এবারও বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয় ঘরে ঘরে। এমতাবস্থায় চলমান বর্ষায় যাতে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ভেঙে না যায়, এ জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬ স্থান জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে। এদিকে চলতি মাসের শুরু থেকেই ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মনু নদে পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পানি বেড়ে মৌলভীবাজার শহরের কাছে বিপৎসীমার প্রায় ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রায় আট দিন মনু নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল, কখন, কোথায় বাঁধ ভেঙে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত দু-একটি স্থানে বাঁধের মাটি ধসে পড়া ছাড়া কোথাও মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙেনি। জরুরি মেরামতের কারণে এই দফা স্বাভাবিক বন্যা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু এভাবে সব সময় বন্যা মোকাবিলা সম্ভব হবে না। বারবার একই জায়গা ভাঙছে। অস্থায়ী মেরামত কাজ হচ্ছে। বড় বন্যার সৃষ্টি হলে সাময়িক এই ব্যবস্থা পানিতে ভেসে যেতে পারে। এই বাস্তবতায় স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ ‘মনু নদের ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্প’ নামে ১ হাজার ২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে আছে। প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেই কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটিতে আছে মনু নদের ৩০ কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ, ৮৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাস্থিতিকরণ, ২২ কিলোমিটার খনন ও চর অপসারণ, ৯৮টি সিঁড়ি ও ঘাট নির্মাণ, ৩৪৪টি র‌্যাম নির্মাণ, ২৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, প্রতিরক্ষা বাঁধের মৌলভীবাজার শহর অংশের আড়াই কিলোমিটারে আরসিসি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, ৩০ কিলোমিটারে বাঁক ও ভাঙনপ্রবণ স্থানগুলোতে সিসি ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করা প্রভৃতি।

সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমও মৌলভীবাজার সফরে এলে তাঁদের বক্তব্যে মনু নদের স্থায়ী বন্যানিয়ন্ত্রণের জন্য ১ হাজার ২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মনু নদের বন্যা প্রতিরোধে বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মনু নদের পানিতে যাতে পাড় ভেঙে ঘরবাড়ি তলিয়ে না যায়, গ্রাম ও শহর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ জন্য মনু নদের দুই পাড় সংরক্ষণ করার জন্য ১ হাজার ২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে। প্রকল্পটি পাস হয়ে গেলে মৌলভীবাজারের মানুষকে অতীতের মতো আর বন্যার পানিতে ভাসতে হবে না। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হবে না। মানুষকে কষ্ট পেতে হবে না।’

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনু নদে টানা আট দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো জরুরি মেরামতের কারণে এলাকা সাময়িক বন্যামুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে। স্থায়ী মেরামত কাজ হলে এই তিন উপজেলায় আর বন্যা হবে না।’