তদন্ত পিবিআইতে হস্তান্তরের দাবি আয়শার বাবার

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। আজ বুধবার বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তিনি।

মোজাম্মেল হকের অভিযোগ, বরগুনার পুলিশ প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে তাঁর মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে। একইভাবে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পায়তারা চলছে। এ জন্য বিশেষ মহলের চাপে রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ গত শুক্রবার ফের সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের (মোজাম্মেল ও তাঁর স্ত্রী) গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক দাবি করেন, আয়শার ওপর শ্বশুরের শতভাগ আস্থা ছিল বলেই তিনি (দুলাল শরীফ) এই হত্যা মামলায় তাঁকে এক নম্বর সাক্ষী করে ছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে আয়শাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও পরে মানববন্ধন করেন। এরপর গত ১৬ জুলাই আসামিদের শনাক্ত করার কথা বলে আয়শাকে পুলিশ লাইনসে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে সোয়া ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আয়শাকে গ্রেপ্তার দেখায়। মোজাম্মেল হকের অভিযোগ, আদালতে তাঁর মেয়ে ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তা রিমান্ডে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

মোজ্জামেল হকের ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডে আসামি রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজীর আগ্রাসী ভূমিকার পেছনে রয়েছে তাঁদের খালা বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকির সঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। মোজ্জামেল হকের ভাষ্য, গত ৫ মে বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বাসার ফটকের পাশে থাকা মাটিয়াল ক্যাফে রেস্টুরেন্টে নাশতা করতে যান রিফাত শরীফ ও আয়শা। রিফাত শরীফ তাঁর মোটরসাইকেল ওই ফটকের সঙ্গে রাখতে গেলে চেয়ারম্যানের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকি বাধা দেন। এতে রিফাত শরীফ গালাগাল করেন খুকিকে। যা খুকি তাঁর ভাগনেদের (রিফাত-রিশান) কাছে নালিশ দেন। মোজ্জামেল হকের ভাষ্য, ঘটনার সময় হত্যাকারীরা রিফাত শরীফকে বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল।’ মোজাম্মেল হক বলেন, আসামি রিফাত-রিশান তাঁদের খালাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন।

মোজ্জামেল হকের ধারণা, রিফাত-রিশানই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে। পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করলে এ বিষয়ে সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। তাঁর সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারছে না। প্রভাবশালী মহলের চাপে রিমান্ড শুনানির দিন বরগুনার কোনো আইনজীবী আয়শার পাশে দাঁড়াতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মা প্রভাবশালী মহলের চাপেই এখন আয়শাকে নিয়ে নানা কথা বলছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক ছাড়াও তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।