রংই মলিনার ভাষা

মলিনা খাতুন বৃষ্টি শুনতে ও বলতে না পারলেও নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে রং-তুলির মাধ্যমে। ছবি: সংগৃহীত
মলিনা খাতুন বৃষ্টি শুনতে ও বলতে না পারলেও নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে রং-তুলির মাধ্যমে। ছবি: সংগৃহীত

পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা। কারও হাতে মুখোশ, কারও হাতে বেলুন। আবার বাউল বাজাচ্ছেন একতারা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৪২৬ বঙ্গাব্দের শুভেচ্ছা কার্ডের একটি ছবির দৃশ্য এটি। রঙিন ছবিটিতে আছে রঙের যথাযথ ব্যবহার। খুদে শিল্পী মলিনা খাতুন বৃষ্টি যে রং ভালোবাসে। ওর যোগাযোগের ভাষাটাই সেই রঙে।

বেশ কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা কার্ডে প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়। এ বছরের পয়লা বৈশাখের কার্ডে মলিনার একটি ছবিও রয়েছে। ১০ বছর বয়সী মলিনা বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। বাবা রিকশাচালক আর মা গৃহিণী। ছোট এক বোন আছে।

মলিনা ২০১৬ সাল থেকে ‘সীডে’ (সোসাইটি ফর এডুকেশন অ্যান্ড ইনক্লুশন অব দ্য ডিজএবল্ড) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ছে। ‘সীড’-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর কারিশমা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মলিনা রং নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করে। যেহেতু সে কথা বলতে পারে না, তাই তার যোগাযোগের অন্যতম ভাষা হচ্ছে রং। এ ছাড়া সে নাচতে খুব ভালোবাসে, অভিনয়ও পারে। মলিনাকে প্রাথমিক ইশারা ভাষা শেখানো হচ্ছে।’

মলিনার আঁকা ছবিটি এবারের পয়লা বৈশাখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
মলিনার আঁকা ছবিটি এবারের পয়লা বৈশাখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

কারিশমা আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বাচ্চাদের আঁকা ছবি চাওয়া হয়। এ বছর ‘সীড’ থেকে পাঁচ শিশুর ছবি পাঠানো হয়। সেখান থেকে মলিনার ছবি নির্বাচিত হয়। এ ছবির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছে মলিনা।

মেয়ে বলতে ও শুনতে না পেলেও বাবা মো. আলী মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। মেয়ের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন, তাতেই সে ভীষণ খুশি। মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েকে আমি পড়াশোনা করাতে চাই, যাতে নিজে কিছু করে চলতে পারে।’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে জমি কেনার পরিকল্পনা করেছেন। ভবিষ্যতে মেয়েদের নামে তা দিয়ে যাবেন।