ভাসানচর না থাকলে জেআরপিতে জাতিসংঘকে সহায়তা নয়

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়টি জেআরপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জাতিসংঘকে। তা না হলে রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী বছরের যৌথ সাড়াদান বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করবে না বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সভা আজ বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকার জাতিসংঘের কাছে এ বার্তা দিয়েছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের জন্য যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত দুই দফায় যৌথ সাড়াদান কর্মসূচিতে (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপি) জাতিসংঘ সমন্বয় করে আসছে।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় টাস্ক ফোর্সের (এনটিএফ) ২৬তম সভায় একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল, আগামী বছরের জেআরপিতে কোন কোন উপাদান থাকবে এ বিষয়টি। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার থেকে অনুষ্ঠেয় মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জেআরপি নিয়ে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভাসানচর নিয়ে একটি উপস্থাপনা বৈঠকে তুলে ধরা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে সরিয়ে নিতে সরকার ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে তাদের অবস্থানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। প্রথম দুটি জেআরপিতে তহবিল সংগ্রহে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ। বুধবারের বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে জানিয়েছেন যে, জেআরপিতে অবশ্যই ভাসানচরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না।

জানা গেছে, টাস্কফোর্সের শেষ বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রসচিব। রোহিঙ্গাদের জন্য কতটা আর প্রশাসনিক কাজে কতটা অর্থ খরচ হয়েছে—তার একটি স্পষ্ট হিসাব থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সাহায্যপ্রার্থী লোকজনের জন্য ৩৫ শতাংশ এবং বাকি ৬৫ শতাংশ প্রশাসনিক কাজে খরচ করে থাকে। অন্য এক কর্মকর্তা জানান, জেআরপির আগামী দফায় নিরাপত্তা বিষয়টি রাখার কথা বলেছে বাংলাদেশ। কারণ কক্সবাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিপুল অর্থ খরচ করছে। সেখানে বাড়তি পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধি মোতায়েন করা হয়েছে। এই বিষয়টি যুক্ত না থাকলে যৌথ সাড়াদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সেটিও এতে রাখতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৯২০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে তহবিল সংগ্রহের হার ৩৫ শতাংশের মতো।