আবার বাড়ছে পানি, আতঙ্ক

ক‌য়েক ‌দিনের টানা বৃষ্টিতে গতকাল কু‌ড়িগ্রা‌মে নদ–নদীর পা‌নি আবার কিছুটা বে‌ড়ে‌ছে। আকা‌শে কা‌লো মে‌ঘের ঘনঘটা তাই বানভাসিদের দু‌শ্চিন্তা আরও বা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ন‌দের পোড়ার চরে বি‌কে‌ল চারটায়। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ক‌য়েক ‌দিনের টানা বৃষ্টিতে গতকাল কু‌ড়িগ্রা‌মে নদ–নদীর পা‌নি আবার কিছুটা বে‌ড়ে‌ছে। আকা‌শে কা‌লো মে‌ঘের ঘনঘটা তাই বানভাসিদের দু‌শ্চিন্তা আরও বা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ন‌দের পোড়ার চরে বি‌কে‌ল চারটায়। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটেছে। গতকাল বুধবার কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও বেড়েছে। নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট এবং লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়েছে।

পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে এক শিশু মারা গেছে। নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

কুড়িগ্রামে বাঁধে ভাঙন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা তিনটার দিকের ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নদী দুটিতে পানি বিপৎসীমার যথাক্রমে ৫০ ও ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

নতুন করে পানি বাড়ায় প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কিত ছড়িয়ে পড়েছে। উলিপুর উপজেলার গেন্দার আলগা ও খেওয়ার চর থেকে আবদুল
হামিদ, সদর উপজেলার রলাকাটা চর থেকে হনুফা বেওয়া এবং নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া এলাকার আবদুল কুদ্দুসসহ অনেকে বলেন, বন্যা নাকি আরও বড় হবে। বৃষ্টি সহজে থামবে না। তাঁদের ফের বাড়ি ছাড়তে হবে।

এদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী পৌর এলাকার সাঞ্জুয়ার ভিটা সড়ক ভেঙে গেছে। তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া বাঁধের ৫০ ফুট এলাকা ধসে গেছে। পাউবোর পক্ষ থেকে সেখানে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট থেকে ফুলবাড়ী বাঁধের ওপর পাকা রাস্তাটি বাংলাবাজার এলাকায় ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাঁধটি ভাঙলে ৪০-৫০টি গ্রাম বন্যার প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাঁধের রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় গতকাল বাঁশ দিয়ে বালুর বস্তা বেঁধে দেওয়া হয়। পানির চাপে তাও ধসে গেছে।

জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বাঁধটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দুই-চার দিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।

নীলফামারীতে পরিস্থিতির অবনতি

নীলফামারীতে গতকাল বেলা তিনটায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ছয়টায় ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে পাউবো।

পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল সকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গাইবান্ধায় পানি বেড়েছে

গাইবান্ধায় গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঘাঘট নদীর পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ জেলায় অন্তত ১৮ জায়গায় পাউবোর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ৪২৪টি গ্রামে পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ছয় লাখ মানুষ।

গতকাল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মিল্লাত মিয়া নামে চার বছরের এক শিশু মারা গেছে। সে এ গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে।

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান বলেন, গত দুই দিনে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের আসামেও বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে আগামী দুই দিনে আরও ছয় থেকে সাত সেন্টিমিটার পানি বাড়তে পারে।

লালমনিরহাটে পানি বিপৎসীমার ওপর

লালমনিরহাটে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

 [প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীবগুড়া]