ইলিশের সন্ধানে সাগরে

মাছ ধরা শুরু হলো। রঙিন ‘ডিঙি নৌকা’ নামানো হচ্ছে সাগরে। টেকনাফের বড়ডেইল উপকূল থেকে গতকাল সকালে।  প্রথম আলো
মাছ ধরা শুরু হলো। রঙিন ‘ডিঙি নৌকা’ নামানো হচ্ছে সাগরে। টেকনাফের বড়ডেইল উপকূল থেকে গতকাল সকালে। প্রথম আলো

টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর কক্সবাজারের জেলেদের জন্য উন্মুক্ত হলো বঙ্গোপসাগর। রূপালি ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের সন্ধানে ইতিমধ্যে সাগরে নেমেছে অন্তত তিন হাজার ট্রলার।

দুই–এক দিনের মধ্যে আরও দুই হাজার ট্রলার সমুদ্রে নামতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার ৩৩টি হাটবাজারে সাগরের মাছ উঠবে বিক্রির জন্য। জেলায় মাছ ধরার ট্রলার আছে পাঁচ হাজারের বেশি। ট্রলারের জেলেশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে ট্রলারসমূহের সমুদ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত তিন হাজার ট্রলার সাগরে নেমেছে। দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে জেলেরা মাছ নিয়ে উপকূলে ফিরলে মাছের সংকট দূর হবে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এবং সৈকতের ঝাউবাগানের ভেতরে শত শত রঙিন ‘ডিঙি নৌকা’। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় নৌকাগুলো ৬৫ দিন পড়েছিল। গতকাল সকাল থেকে ডিঙি নৌকাগুলো সাগরে নামতে শুরু করেছে।

সকাল নয়টায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ও বড়ডেইল অংশে দেখা গেছে, দুই চাকাবিশিষ্ট ঠেলা গাড়িতে তুলে ডিঙি নৌকাগুলো সাগরে নামানো হচ্ছে। নৌকায় ভর্তি আছে মাছ ধরার জাল। একেকটি নৌকায় জেলে আছেন পাঁচ-ছয়জন করে।

একটি নৌকার জেলে আবদুল হাকিম (৪৫) বললেন, ছোট আকৃতির এই ডিঙি নৌকা দিয়ে সাগরের সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার গভীরে যাওয়া যায়। সেখানে জাল ফেলে ছোট আকৃতির পোপা, ছুরি, লইট্যা, ফাইস্যা, বাটা, চিংড়ি ইত্যাদি ধরা হয়। ইলিশ, লাক্ষ্যা, রূপচান্দা, কোরালসহ বড় আকৃতির মাছ পাওয়া যায় ৫০-১০০ কিলোমিটার গভীর সাগরে। সেখানে যেতে বড় ট্রলার দরকার। বড় ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬ থেকে ২২ জন। 

গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁকখালী নদী ফাঁকা। নদীতে নোঙরে থাকা হাজারো ট্রলার ইতিমধ্যে সাগরে নেমে পড়েছে। কয়েকটি ট্রলার বরফ ও জ্বালানি নিয়ে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ফিশারিঘাটের পাশেই বাঁকখালী নদী। বাঁকখালী নদী থেকে ট্রলার ছেড়ে প্রথমে মহেশখালী চ্যানেল, তারপর সোনাদিয়া দ্বীপ হয়ে ট্রলার ছুটছে শত কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন সাগরের দিকে।

ফিশারিঘাটে কথা হয় স্থানীয় নুনিয়াছটার জেলে আবদুল গণীর সঙ্গে। বয়স তাঁর ৫৫। ৩২ বছর ধরে তিনি গভীর সাগরে মাছ ধরছেন। 

আবদুল গণী বলেন, টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এ কারণে বঙ্গোপসাগর এখন ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছে ভরপুর হবে।

তিনি বলেন, আশা করছি জাল ফেললেই ধরা পড়বে রূপালি ইলিশ, লাক্ষ্যা, কোরাল, পোপা, গুইজ্যাসহ নানা প্রজাতির মাছ। কিন্তু ইলিশ বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে, দল বেঁধে। ইলিশ সমুদ্রের যেখানে বিচরণ করে—সেখানটার পানি লালচে আকার ধারণ করে। এটা যাঁরা ধরতে পারেন—তাঁদের জালেই আটকা পড়বে হাজার হাজার ইলিশ।

কক্সবাজার জেলার বৃহৎ পাইকারি মাছের বাজার নুনিয়াছটার এই ফিশারিঘাট। গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত অধিকাংশ মাছ এ ঘাটে বেচাবিক্রি হয়।

ঘাটে কথা হয় মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সমিতির সদস্যসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।

জয়নাল আবেদীন বলেন, আগামীকাল থেকে এ ঘাটে মাছ আসতে শুরু করবে। ওই দিন যাঁরা মাছ আনবেন তাঁরা ভালো দাম পাবেন।

জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, ৮০০ গ্রামের বেশি ওজনের ১০০টি ইলিশের দাম পাবেন ২৮ হাজার টাকা, ৭০০ গ্রামের বেশি ১০০টি ইলিশে ২৫ হাজার এবং ৬০০ গ্রামের কম ওজনের ১০০টি ইলিশে ১৬ হাজার টাকা। মাছে বাজার সয়লাব হলে দামও কমে যেতে পারে। এটা নির্ভর করছে ঢাকার বাজারের ওপর।