শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল, আঙুল কাটল কে?

ঘরে দুই শিশুপুত্রকে ঘুম পাড়িয়ে দরজায় তালা মেরে পাশে দেবরের বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বারান্দায় বসে স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে নিজেদের ঘরের ভেতরে মানুষের কায়া দেখেন। ছেলেধরা আতঙ্কে ছুটে যান। ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। দেখেন, বড় ছেলের হাতের একটা আঙুল কাটা।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খুনিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রহস্যজনক এ ঘটনায় পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

শিশুটির নাম আফ্রিদি। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। শিশুটি স্থানীয় একটি নূরানি মাদ্রাসার হাফেজি শাখার ছাত্র।

কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির হাতের আঙুল কেটে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা শিশুটির পরিবারের। পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। কোনো ব্যক্তি শিশুটিকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার মতো আলামত তারা পায়নি। ঘরের মধ্যে কোনো ধারালো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি।

পরিবারের বরাত দিয়ে হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রহিম বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগম তাঁর দুই ছেলে আফ্রিদি (৭) ও আরাফাতকে (৩) ঘরের মধ্যে পৃথক দুটি খাটে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। এ সময় টিন ও বাঁশের বেড়া দেওয়া দোচালা টিনের ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো ছিল। ছেলেধরা আতঙ্কে ঘরের টিনের দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে পাশে দেবরের ঘরে যান রত্না। দেবরের ঘরের বারান্দায় বসে পঞ্চগড় বাজারে থাকা স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন তিনি। একই সঙ্গে টিভি দেখছিলেন। একপর্যায়ে রত্না তাঁর ঘরের দরজা বরাবর ভেতরে একটি মানুষের ছায়া দেখতে পান। তিনি ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার করেন। দেবরের ঘরে থাকা স্বজনসহ রত্না তাঁর ঘরের দিকে ছুটে যান। তালা লাগানো দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। এতে দরজা ভেঙে যায়। ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, আফ্রিদি তার ছোট ভাই আরাফাতকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আফ্রিদির বাঁ হাত থেকে রক্ত ঝরছে। তার বাঁ হাতের অনামিকাটি গুরুতর জখম অবস্থায় দেখা যায়।

পরিবারের সদস্যরা আফ্রিদিকে রাত ১১টার দিকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আনার পর শিশুটি কান্নাকাটি করলেও এ সময় সে কোনো কথা বলেনি।

শিশুটির আঘাত গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) পাঠিয়ে দেন। শিশুটি বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান বিপ্লব বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে বাঁ হাতের অনামিকা কেটে যাওয়া শিশুটিকে জরুরি বিভাগে পাই। আঙুলটি হাড়সহ বিচ্ছিন্ন হয়ে সামান্য চামড়ায় ঝুলছিল। দেখে মনে হয়েছে, কোনো ধারালো অস্ত্রে কেটেছে। আমাদের এখানে কোনো অর্থোপেডিক চিকিৎসক নেই। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছি।’

আফ্রিদির বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই যে এমনটা করবে। এটা অজ্ঞাত কেউ করে পালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

হাফিজাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মুসা কলিমুল্লাহ প্রধান বলেন, রাতে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে করতে পরিবারের লোকজন ঘরের টিনের দরজায় লাগানো তালা না খুলে বাইরে থেকে তা ভাঙার চেষ্টা করেন। দরজা ভাঙার ঘটনা থেকে শিশুটির হাতের আঙুলে আঘাত লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাস আহমদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেছি। সেখানে বাইরে থেকে গিয়ে কেউ শিশুটিকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার মতো আলামত পাইনি। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করি, শিগগির এই ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারব।’

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হাছান বলেন, বাইরের কোনো ব্যক্তি ঘরে ঢুকে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিজেদের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ছেলেধরার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই।