জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চান আয়শা সিদ্দিকা

আয়শা সিদ্দিকা
আয়শা সিদ্দিকা

বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চান তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা। গতকাল বুধবার বরগুনা জেলা কারাগারে আয়শা সিদ্দিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এই কথা বলেছেন আয়শার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। তিনি জানান, আয়শা বলেছেন, পুলিশ ‘জোরপূর্বক, শেখানো মতে’ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছে।

এদিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, পুলিশ শুরু থেকেই একটি প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে আয়শাকে ফাঁসাচ্ছে। তবে এই প্রভাবশালী কারা, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে এর আগে ২০ জুলাই তিনি বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‌‘এসব শম্ভু (সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) বাবুর খেলা।’ এ ঘটনার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করা হয়। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আয়শা রিফাতকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেওয়ার পর রিফাত মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করনে। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী করা হয়। ঘটনার ১৯ দিন পর ১৩ জুলাই রিফাতের বাবা আবদুল হালিম সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সঙ্গে আয়শা সিদ্দিকা জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরদিন ১৪ জুলাই আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়, যেখানে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। 

এই ঘটনার দুই দিনের মাথায় ১৬ জুলাই আয়শাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। দুই দিন রিমান্ডে থাকার পর তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানো হয়। পরে আয়শার বাবা মেয়ের সঙ্গে কারাগারে দেখা করে এসে বলেন, জোরজবরদস্তি করে পুলিশ আয়শাকে যা বলতে বলেছে, তা–ই তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত আয়শাসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তবে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনো ৪ জন গ্রেপ্তার হননি। 

এদিকে গতকাল সকাল ১০টায় বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মৃধা বলেছেন, বরগুনায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনে মাদকের কারণ রয়েছে। নয়ন বন্ডদের আশ্রয়দাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করে তিনি বলেন, এই নয়ন বন্ড এক দিনে তৈরি হয়নি।

আয়শার সঙ্গে আইনজীবীর সাক্ষাৎ 

গতকাল বেলা সোয়া একটায় বরগুনা জেলা কারাগারে আয়শা সিদ্দিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁর আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম ও সাইফুর রহমান। ১টা ৪০ মিনিটে বের হয়ে এসে প্রধান ফটকের সামনে মাহবুবুল বারী সাংবাদিকদের বলেন, আয়শাকে কিছু আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি গিয়েছিলেন। জেল সুপারের উপস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে ১০ মিনিটের মতো কথা হয়েছে। আয়শা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের অবস্থা ভালো নয়। 

মাহবুবুল বারী বলেন, আয়শা বলেছেন তাঁকে জোরপূর্বক শেখানোমতে পুলিশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বলেছে। তিনি এটা প্রত্যাহার করতে আগ্রহী। তিনি তখন তাঁকে প্রত্যাহারের পদ্ধতির কী হবে, তা শিখিয়ে দিয়ে এসেছেন। 

রিফাত ও রিশান ফরাজী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী

 বরগুনা প্রেসক্লাবে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন দাবি করেছেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগে রিফাতের সঙ্গে বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহারের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শামসুন্নাহার তাঁর বোনের ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেন। রিফাত ও রিশান ফরাজী তাঁকে মা বলে ডাকতেন। যেদিন হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল, সেদিন হত্যাকারীরা বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।’

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, তাঁর ধারণা, এই ঘটনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রিফাত-রিশানের আগ্রাসী ভূমিকার কারণ। মাকে গালাগাল করার প্রতিশোধ নিতে গিয়েই রিফাত ও রিশান ফরাজী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অগ্রভাগে ছিলেন। 

তবে দেলোয়ার হোসেন গতকাল পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী শামসুন্নাহারের সঙ্গে রিফাতের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। রিফাতের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীরও ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় নেই।