ভুলে ফেলে যাওয়া এক নারীর ব্যাগ বিমানবন্দর থেকে গায়েব

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

প্রবাসী ফাহিমা মলির ফেলে যাওয়া ব্যাগটি নয় মিনিট ধরে পড়ে ছিল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনাল-২-এর চেক ইন কাউন্টারের পাশে। সেটি দেখলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিরাপত্তা অপারেটর ফরিদুল হক কোনো ব্যবস্থা নেননি। ১২ মিনিট পর লাগেজটি স্ক্যান করতে মেশিনকক্ষে নেন কর্তব্যরত আনসার সদস্য ফজলুল হাকিম। সেখানে সাত মিনিট রেখে দেন। এরপর আনসার ফজলুল এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত পুলিশের এএসআই জুনাব খানকে কথা বলতে দেখা যায়। এএসআই জুনাবের ইশারায় আনসার সদস্য ব্যাগটি একটি ট্রলিতে তুলে রাখেন। ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট পর এএসআই জুনাব খানকে হলুদ ওড়না পরা একজন নারীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তাঁরা লাগেজসহ ট্রলিটি নিয়ে বাইরে চলে যান। এরপর ব্যাগটির কী হলো, তা জানা যায়নি।

ফাহিমা ও তাঁর স্বজনেরা জানান, গত বছরের ১৫ নভেম্বর ড্রাগন এয়ারের উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মস্থলে ফেরার সময় ভুলে ব্যাগটি ফেলে যান তিনি। ওই ব্যাগে তাঁর মায়ের স্মৃতিবিজড়িত ও স্বামীর দেওয়া গয়না, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। উড়োজাহাজ ছাড়ার পর ফাহিমার হঠাৎ মনে পড়ে, তিনি লাগেজটি ফেলে এসেছেন। দ্রুত তিনি ড্রাগন এয়ার কর্তৃপক্ষকে জানান এবং হংকংয়ে নেমে ঢাকার বেবিচক কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাগ ফেরত পেতে ই-মেইল পাঠান। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন। তিনি ও ঢাকায় বসবাসরত তাঁর কয়েকজন স্বজন দফায় দফায় বেবিচকের চেয়ারম্যান (সম্প্রতি অবসরে যাওয়া), পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন ও চিঠি পাঠান। অনুরোধ করে বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে তিনি ব্যাগ চুরির পুরো দৃশ্যটি সংগ্রহ করেন। ব্যাগটি চুরির অকাট্য প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর তিনি আশা করেছিলেন, ব্যাগ অথবা এর মালামাল ফেরত পাবেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কারও সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। হতাশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন ফাহিমা।

ভিডিও ফুটেজের হলুদ ওড়না পরা ওই নারীকে ফাহিমা যাত্রী হিসেবে ধারণা করলেও বিমানবন্দরে কর্মরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তাদের মতে, ওই নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী।


ফাহিমা মলি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওতে স্পষ্ট দেখলাম, ড্রাগন এয়ারের কাউন্টারের সামনে থেকে লাগেজটি ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। এরপর লাগেজ ছাড়া পুলিশ ভেতরে ফেরত এল, কে লাগেজটি নিল? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে সব বলেছি, অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পেলাম না।’

এদিকে লাগেজটি হারানোর পর বেবিচকের কাছে চিঠি দেন বিমানবন্দরের পরিচালক (অ্যাভসেক) উইং কমান্ডার নূর আলম সিদ্দিকী। এর প্রায় ছয় মাস পর বিষয়টি জানিয়ে গত ২৯ মে বিমানসচিবের কাছে চিঠি পাঠান বেবিচকের চেয়ারম্যান। চিঠিতে চেয়ারম্যান জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এএসআই জুনাব খান আনসার সদস্য ফজলুল হাকিম ও একজন নারীর যোগসাজশে যাত্রী ফাহিমা মলির ট্রলিব্যাগ নিয়ে যান এবং ভেতরের মালামাল আত্মসাৎ করেন। তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মাধ্যমে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন।

গত ১৮ জুন এই চিঠির অনুলিপিসহ জুনাব খান ও ফজলুল হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিমান মন্ত্রণালয়। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো পুলিশের লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব না। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এত বড় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর এই পুলিশ ও আনসার সদস্যের চাকরি থাকার কথা নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর মালামাল তো ফেরত দিতেই হবে। না দিয়ে কোথায় যাবে?’