গৌরীপুরের ৮ গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের আটটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। আটটি গ্রামের ভাঙন ছাড়া আরও তিনটি গ্রাম ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা ভাংনামারী ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ, ভাটিপাড়া, ভাংনামারীর চর, বয়ড়া, খোদাবক্সপুর, দূর্বাচর, গজারিপাড়া ও খুলিয়ারচর গ্রামে ভাঙন শুরু দেখা দেয়। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক, কালভার্টসহ এক হাজার একরের ফসলি জমি।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, কমপক্ষে ১০ বছর ধরে বর্ষাকালে ভাংনামারী ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোয় ভাঙন দেখা দেয়। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য পরিবার নিজেদের বাড়িঘর ও ফসলের জমি হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

পাঁচ বছর আগে ভাংনামারী ইউনিয়নের খোদাবক্সপুর গ্রামে বাঁধ নির্মাণের জন্য গ্রামবাসী নিজেদের মধ্যে চাঁদা ওঠায়। সেই টাকায় বালুর বস্তা দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে সেই বাঁধ পরের বছর ভেঙে যায়। এরপর ভাঙন রোধে আর কোনো বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মফিজুন নূর খোকা বলেন, চলতি বছর আবারও ভাঙন দেখা দেওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ভাঙনকবলিত ও পানিবন্দী পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে ইউনিয়নের মাঝেরটেক, চরভবখালী ও উজান কাশিয়ারচরের শতাধিক ঘরবাড়ি। ওই পরিবারগুলো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে তলিয়ে গেছে অনন্ত ফেরিঘাট। নদের পানিতে ডুবে গেছে বয়রা বাজারের প্রবেশপথ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

ফেরিঘাটের নৌকার মাঝি রাসেল মিয়া বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে আমার দুটি নৌকা ব্রহ্মপুত্রে ডুবে গেছে। ওই নৌকা দুটিই ছিল আয়ের একমাত্র অবলম্বন। এখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। আমার মতো অনেকের নৌকা পানিতে ডুবে গেছে।’

ভাটিপাড়া ও খোদাবক্সপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত দুই সপ্তাহে ওই দুই গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার ভাঙনের মুখে। ঘর হারানো পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। খোলা আকাশের নিচেই চলছে রান্না ও খাওয়া।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ময়মনসিংহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ জেলার ৭০টি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে মোট ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের মধ্যে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের গ্রামগুলোও রয়েছে।