রাবি ছাত্র হত্যা মামলায় সাঈদীসহ ১০৭ জনের বিচার শুরু

ফারুক হত্যা মামলায় মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। জজ আদালত, রাজশাহী, ২৪ জুলাই। ছবি: শহীদুল ইসলাম
ফারুক হত্যা মামলায় মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। জজ আদালত, রাজশাহী, ২৪ জুলাই। ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন হত্যার নয় বছর পর আজ বৃহস্পতিবার মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১০৭ আসামির বিচার শুরু হলো।

রাজশাহীর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এনায়েত কবীর সরকারের আদালতে এ অভিযোগ গঠন করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখল নিয়ে শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সংঘর্ষে শিবিরের নেতা-কর্মীরা ফারুককে খুন করে লাশ শাহ মখদুম হলের পেছনের ম্যানহোলে ফেলে রাখে। একই রাতে ছাত্রলীগের আরও তিন কর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন বাংলা বিভাগের সাইফুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফিরোজ মো. আরিফুজ্জামান ও রুহুল আমীন। আসাদুর রহমান নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মীকে শিবিরের ক্যাডাররা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি দৃষ্টিহীন। ঘটনার পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বাদী নগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শিবিরের ৩৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা নেতা-কর্মীসহ মোট ১১০ জনকে আসামি করা হয়।

আসামিদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের। এ ছাড়া মো. শাহীন নামে আরও এক আসামি মারা গেছেন। ২০১২ সালের ৩০ জুলাই রাজপাড়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ফারুক হত্যা মামলার ১০৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। আসামিদের মধ্যে ৬০ জন জামিনে আছেন। অন্যরা পলাতক। আদালতে সাঈদীসহ আজ ৬০ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ মামলার শুনানির জন্য গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। বেলা ১১টার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। হুইল চেয়ারে করে তাঁকে বিচারকক্ষে আনা হয়।

সরকারি কৌঁসুলি সিরাজী শওকত সালেহীন বলেন, ১০৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের শুনানির সময় ৫৯ আসামি কাঠগড়ায় ছিলেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন কাঠগড়ার বাইরে হুইল চেয়ারে। বয়স বিবেচনায় তাঁকে কাঠগড়ার বাইরে রাখা হয়। পরে শুনানি ও অভিযোগ গঠন শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে আদালত থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজী শওকত সালেহীন বলেন, অভিযোগের শুনানির সময় আসামিদের কাছে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন সাঈদী বলেন, হত্যাকাণ্ডে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেনও না। তিনি আদালতের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন।

মামলার অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে আইনজীবী শওকত সালেহীন বলেন, ফারুক হত্যা ঘটনার দুই দিন আগে ৭ ফেব্রুয়ারি মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী জামায়াতের শীর্ষ নেতারা শহরে ছাত্রশিবিরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি খুনের নির্দেশনা দেন। তাঁরা সংঘর্ষ বাঁধিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুককে হত্যা করে। তাই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ সব আসামির বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া শুধু সাঈদীর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার আরও একটি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।

অভিযোগের শুনানির সময় আসামিপক্ষে অন্তত ১০ জন আইনজীবী ছিলেন। তাদের নেতৃত্ব দেন আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। আদালতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলেও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলো। মামলার আগামী ধার্য দিন থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। মামলাটিতে শতাধিক সাক্ষী আছেন বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক হালিমা খাতুন বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাঈদীকে আবার কাশিমপুরে পাঠানো হবে।

এদিকে সাঈদীকে আদালতে তোলাকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই রাজশাহীর আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার পুরো আদালত চত্বরকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। আদালত চত্বরের সবগুলো প্রবেশমুখে তল্লাশি ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।