অপহরণের মামলা করতে গিয়ে থানায় হলো বিয়ে

এক যুবক মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগে মা গেছেন থানায় মামলা করতে। মামলার এজাহারও প্রস্তুত। ঠিক এমন সময় থানায় উপস্থিত হয় ছেলের পক্ষ। তাঁরা ওই দুজনের মধ্যে বিয়ে দিতে মেয়ের পক্ষকে প্রস্তাব দেয়। একপর্যায়ে মেয়ের পক্ষ বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়। ফলে মামলার পরিবর্তে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় থানার অভ্যন্তরে। সেখান থেকেই কনেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বরের বাড়িতে।

অপহরণচেষ্টার ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের দশআনি এলাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে থানায় ওই মামলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিয়ে সম্পন্ন হয় বিকেলে। সংশ্লিষ্ট যুবকের (বর) নাম ইয়াকুবুর রহমান (২৬)।

তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইয়াকুবুর রহমান মোটরসাইকেলে তাঁর ছোট ভাই ইয়াছিনকে (২০) নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়িতে যান। তরুণী আঙিনায় কাজ করছিলেন। ওই দুই ভাই তাঁকে জোর করে মোটরসাইকেলে তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের লোকজন তাঁদের আটক করে পুলিশে খবর দেন। এ ব্যাপারে আজ দুপুরে তরুণীর মা ওই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় যান। ইয়াকুব ও ইয়াছিন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বৈরাগপুর এলাকার নুর নবীর ছেলে।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও পরিবার দুটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই তরুণী চলতি বছর জেলা শহরের একটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। যুবক ইয়াকুবুর রহমান বিদেশে থাকেন। এই দুজনের মধ্যে আড়াই বছর ধরে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক চলে। কয়েক মাস আগে ইয়াকুব দেশে ফেরেন। সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তিনি ওই তরুণীর বাড়িতে বেড়াতে যান। কিন্তু ইয়াকুবের একটি আচরণ অপছন্দ হওয়ায় তরুণীর মা এই প্রস্তাব নাকচ করে তাঁকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে ইয়াকুব ক্ষিপ্ত হন। এই ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তরুণীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ময়নাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ মামলা নেওয়ার পক্ষে ছিল। এজাহারও লেখা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছেলে পক্ষের প্রস্তাবে মেয়ের পক্ষ মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে হয়।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ইয়াকুব তরুণীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টাসহ অন্যান্য সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন। পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর মেয়েকে ছেলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইয়াকুব ও তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।