'সরকার বিএনপি মারতে পারে এডিস মশা মারতে পারে না'

খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বর্তমান সরকার এডিস মশা মারতে পারছে না। তবে তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারতে পারে। আর সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিচার পাওয়ার আশা এখন দুরাশা।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে খুলনা নগরের শহীদ হাদিস পার্ক চত্বরে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সরকার এডিস মশা ঠিকমতো মারতে পারে না, তবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ঠিকই মারতে পারে। মশা কামড়ালে তবু অনেকে ভালো হয়ে যায়, এই সরকারের অনেক লোক আছে যারা রক্ত চুষে চুষে খেয়েই চলেছে। ’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। একটি দল বারবার ক্ষমতায় এসে সব সময় গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার। বিচার পাওয়ার আশা এখন দুরাশা।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব জোট প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে দানব সরকারকে পরাজিত করার জন্য আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। কিছুসংখ্যক মহল অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, বিএনপি যে সমাবেশ করছে, বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে গেছে, ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে পরিষ্কার ঘোষণা দিতে চাই, ২০–দলীয় জোটও ঠিক আছে, ঐক্যফ্রন্টও ঠিক আছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সরকারকে পরাজিত করব।’

সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন নগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। ১২টা থেকেই হাদিস পার্কে ভিড় করতে থাকেন নেতা–কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন তাঁরা। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, দিতে হবে’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন নানা স্লোগান ছিল সমাবেশ স্থলে। মাথায় কাপড়, হাতে প্ল্যাকার্ড, বুকে খালেদা জিয়ার ছবি নিয়ে খুলনা নগরের শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।

এর আগে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৫ সালে হাদিস পার্কে একবার সমাবেশ করেছিল খুলনা বিএনপি। এ ছাড়া ২০১৩ সালে সার্কিট হাউস মাঠে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চ ও জনসভা করে খুলনা বিএনপি। সেটাই ছিল সর্বশেষ বড় কোনো গণজমায়েত। এরপর ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে নগরের বড় বাজারের মধ্যে বিএনপি অফিসের পাশে হেলাতলার মোড়ে সমাবেশ করেছিল দলটি। এরপর যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে তা শুধুই দলীয় কার্যালয়ের সামনেই।

বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে দীর্ঘকাল অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঠিক চিকিৎসাও করা হচ্ছে না। সুচিকিৎসার জন্যও তাঁর মুক্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে সামনে দেখতে চায়।

বাজেট, ভোট ডাকাতি, ব্যাংক-শেয়ার মার্কেট লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন মা-বোনেরা নিরাপদ নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ এখন ডেঙ্গু ও পিটিয়ে মারার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দিনে দুপুরে আদালতে বিচারকের সামনে মানুষকে কোপানো হচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধেই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একটার পর একটা বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে। দেশে এখন আইনের শাসন নেই, কোনো বিচার নেই। বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’ তিনি আরও বলেন, সরকারকে একদিন জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আদালতের দায়িত্ব এখন হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর হুকুম তামিল করা। খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা।’ তিনি বলেন, এ সরকারের পতন হলে খালেদার মুক্তি মিলবে, জনগণেরও মুক্তি মিলবে।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিপাকে ফেলতে সরকার দুদককে ব্যবহার করেছে। সরকার ওই মামলায় আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। বিচারকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। সরকারের প্রভাবের কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাই আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।

দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, খুলনা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান প্রমুখ।

এ সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিএনপির ১১টি সাংগঠনিক জেলা ও সেগুলোর উপজেলার বিভিন্ন নেতা সমাবেশে অংশ নেন।