এবার আয়শার মা-বাবার গ্রেপ্তার দাবি শ্বশুরের

রিফাত শরীফ হত্যা
রিফাত শরীফ হত্যা

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় এবার নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির মা–বাবা জড়িত বলে দাবি করেছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। এ জন্য তিনি আয়শার মা–বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন। একই সঙ্গে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থায় হস্তান্তরে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।

আজ শুক্রবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হালিম শরীফ এমন দাবি করেন। এর আগে গত ১৩ জুলাই তিনি ছেলে হত্যায় পুত্রবধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত, এমন দাবি তুলে তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করেছিলেন  । পরদিন ১৪ জুলাই সকালে এই দাবির সপক্ষে তিনি মানববন্ধনও করেন। ওই মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথও বক্তব্য দেন।

আজ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আবদুল হালিম শরীফ বলেন, পুলিশ যথাযথ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রিফাত শরীফ হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত ১৬ জন আসামিকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার ও প্রত্যেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু আসামি পক্ষের কেউ কেউ ‘কুচক্রী মহল’–এর ইন্ধনে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আবদুল হালিম তাঁর ছেলের হত্যা মামলাটি যাতে অন্য কোনো সংস্থার কাছে তদন্তভার হস্তান্তর না করা হয়, সে দাবিও করেন সংবাদ সম্মেলনে।

হালিম শরীফ বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের হত্যাকারী আয়শার বাবা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এতে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি।’

এত দিন পরে কেন এমন অভিযোগ তুলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাত শরীফের বাবা হালিম শরীফ বলেন, ‘নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে আগে বিয়ের তথ্য গোপন করে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন আমার ছেলে রিফাতের সঙ্গে প্রতারণা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আয়শার সঙ্গে বিয়ে না হলে রিফাতের এমন খুনের ঘটনা ঘটত না। এ জন্য আমি মনে করি রিফাত হত্যার সঙ্গে আয়শার বাবা মোজাম্মেল ও মা মিলি বেগম জড়িত।’ তিনি বলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ের আগে যে বিয়ের কাবিননামা এখন দেখানো হচ্ছে তাতে আমাদের স্বাক্ষর আছে কি না, আপনারা যাচাই করে দেখুন। আর এখন যারা এই বিয়ের বিষয়টি সামনে আনছে, তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত।’ তিনি অভিযোগ করেন, এই মামলার মান নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তাঁর মেয়েকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। কেননা এই মামলার আসামিদের সঙ্গে প্রভাবশালী পরিবারের সখ্য এবং আত্মীয়তা রয়েছে। তা ছাড়া এই হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের আড়াল করতেই পরিকল্পিতভাবে তাঁর মেয়ে আয়শাকে জড়ানো হয়েছে। এখন তাঁদেরও জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে।

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমার মেয়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নানা পোস্ট, এডিট করা ছবি, ভিডিও প্রচার করে তার চরিত্র হরণ করে জনমত তৈরি করা হয়েছে। এরপর প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন করে বিষয়টির পূর্ণতা দেওয়া হয়।’ এ সবকিছুই একটি নিখুঁত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা স্ত্রী আয়শার সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। পরে তিনি ওই দিন বিকেলে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ২৭ জুন বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শাকে। এই মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন এজাহারভুক্ত এবং বাকি ৭ জন সন্দেহভাজন আসামি। এর মধ্যে এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখায় ৩ জুলাই।

রিফাত শরীফের বাবার ১৩ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলন ও ১৪ জুলাইয়ের মানববন্ধনের পর ১৬ জুলাই সকালে আয়শাকে তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনসে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আয়শাকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় পুলিশ। তবে শুরু থেকেই আয়শার গ্রেপ্তার প্রভাবশালী মহলকে পুলিশের বাঁচানোর কৌশল বলে দাবি করে আসছেন তাঁর বাবা মোজ্জামেল হক। এ নিয়ে তিনি গত ২৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মামলার তদন্তভার পুলিশের পরিবর্তে পিবিআইতে হস্তান্তরের দাবি করেন