বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিজ্ঞান উৎসবে ঢল

শিক্ষার্থী ও অতিথিদের অংশগ্রহণে উদ্বোধন হয় বিজ্ঞান উৎসবের খুলনা আঞ্চলিক পর্ব। পাবলিক কলেজ, খুলনা, ২৬ জুলাই। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
শিক্ষার্থী ও অতিথিদের অংশগ্রহণে উদ্বোধন হয় বিজ্ঞান উৎসবের খুলনা আঞ্চলিক পর্ব। পাবলিক কলেজ, খুলনা, ২৬ জুলাই। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছিল মধ্যরাত থেকেই। তাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা। সকাল সাতটার দিকে শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। এতে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এই বর্ষণ রুখতে পারেনি বিজ্ঞানপ্রেমীদের। আজ শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যেই শিক্ষার্থীরা হাজির হয় খুলনা পাবলিক কলেজের মাঠে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় বিজ্ঞানচিন্তা-বিকাশ বিজ্ঞান উৎসব খুলনা আঞ্চলিক পর্বে।

প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন উৎসবের অতিথি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিবেন্দ্র শেখর শিকদার। তিনি বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের সব সময়ই এমন প্রতিকূলতার মধ্যে থাকতে হয়। আর প্রতিকূলতা জয় করতে পারলেই বিজ্ঞানে সাফল্য আনা যায়।

বৃষ্টির কারণে উৎসবে খুলনার বাইরের জেলাগুলোর উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে সার্বিক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বৃষ্টির কারণে এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় উৎসব। বাইরে জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে মিলনায়তনেই সমস্বরে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন খুলনা পাবলিক কলেজের উপাধ্যক্ষ মলিন কুমার বসু। পরে বাইরে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

শিবেন্দ্র শেখর শিকদার খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা দেখিয়ে দাও, আপনারা যা পারেননি, আমরা তা পারি।’

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’–এর হেড অব রেগুলেটর অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হুমায়ুন কবির কোম্পানিটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করছে বিকাশ। বিকাশের অর্থায়নে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বইপড়া কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এবার প্রথমবারের মতো খুদে বিজ্ঞানীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বিকাশ। বিকাশ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি। তবে সেখানে কোনো বিদেশি কর্মকর্তা নেই বলে জানান তিনি।

মলিন কুমার বসু বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। ১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য অনেক। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। তিনি খুদে বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে পরিবেশবান্ধব উন্নতি করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা করতে আহ্বান জানান।

উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সেলফি তোলার খুনসুটি। পাবলিক কলেজ, খুলনা, ২৬ জুলাই। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সেলফি তোলার খুনসুটি। পাবলিক কলেজ, খুলনা, ২৬ জুলাই। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

উদ্বোধনের পর শুরু হয় ২০ মিনিটের লিখিত কুইজ পরীক্ষা। পরে মিলনায়তনে বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় নৃত্য ও মূকাভিনয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।

টিউমার ও ক্যানসারের মধ্যে পার্থক্য কী? আগুন কী ধরনের পদার্থ? ফলের মধ্যে কোনো ছিদ্র না থাকলেও পোকা ঢোকে কীভাবে? পদার্থ ও শক্তি—এই দুই ভাগে যদি পৃথিবীর সবকিছুকে ভাগ করা হয়, তাহলে মানুষের হাসি, কান্না, অনুভূতিগুলো কোন ভাগের মধ্যে পড়বে? এমন সব মজার প্রশ্ন আর উত্তরে জমে ওঠে ওই পর্বটি।

পর্বটি সঞ্চালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক আবদুল গফফার। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবেন্দ্র শেখর শিকদার এবং খুলনা সরকারি বিএল কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক সমীর কুমার দেব। এ সময় বিকাশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিকাশের হুমায়ুন কবির।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নিম্নমাধ্যমিক থেকে ১০ জন ও মাধ্যমিক থেকে ১০ জন করে বিজয়ী হয়েছে। আর প্রোজেক্ট থেকে নির্বাচন করা হয় সাতজনকে। নিম্নমাধ্যমিকে সেরাদের সেরা হন, খুলনা সরকারি মডেল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিয়াজ মাহমুদ। মাধ্যমিকে সেরা হয়েছে, খুলনা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. তাহমিদ খান। আর প্রোজেক্টে সেরা হয়েছে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিদ মাহমুদ।