বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ৯ দিন পর মেরামত শুরু

পানির প্রবল স্রোতে দেবে গেছে রেললাইন। রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক করতে শুরু হয়েছে মেরামতের কাজ। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।
পানির প্রবল স্রোতে দেবে গেছে রেললাইন। রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক করতে শুরু হয়েছে মেরামতের কাজ। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।

বানের পানির প্রবল চাপে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত ৯৭ জায়গায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও দেবে গেছে রেললাইন। তাই গত কয়েক দিন থেকে রেলযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রেললাইন দেবে যাওয়ার ৯ দিন পর শুক্রবার সকাল থেকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকায় মেরামতকাজ শুরু করা হয়েছে। মেরামতকাজ চারটি প্যাকেজে চার ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন বুলবুল হোসেন, ফজলুল করিম, শামসুল আলম ও জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের প্রত্যেককে আলাদা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছয় কিলোমিটার পথে ছোট-বড় মিলে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথের পরিমাণ ৬৫০ মিটার। জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ চার ঠিকাদারকে করতে দেওয়া হয়েছে। জরুরি কাজ হওয়ায় মেরামতের টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সংস্কার করতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা লাগতে পারে।

বানের পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। তাই বাদিয়াখালী গ্রামের অসংখ্য মানুষ ঠাঁই নিয়েছে রেললাইনের ওপর। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।
বানের পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। তাই বাদিয়াখালী গ্রামের অসংখ্য মানুষ ঠাঁই নিয়েছে রেললাইনের ওপর। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।

বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা জানান, গাইবান্ধায় বাঁধ ভাঙার কারণে চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সোনালি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাদিয়াখালী ইউনিয়নে পানির চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলায় কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভাঙায় বাদিয়াখালী ইউনিয়নের পূর্বদিকে পানির ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। ১৭ জুলাই রেলপথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। স্রোতের মাত্রা বেড়ে গেলে লাইন থেকে পাথর ও মাটি সরে যেতে থাকে। একপর্যায়ে প্রবল স্রোতে বাদিয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ভেঙে যায়, কোথাও দেবে যায়, রেল কর্তৃপক্ষের ভাষায় যেটাকে ‘ওয়াশ আউট’ বলা হয়।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্যায় বাদিয়াখালী থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জায়গায় ‘ওয়াশ আউট’ হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় ৩ থেকে ১০ ফুটের মতো ভেঙেছে। বড় আকারে ভেঙেছে তিন স্থানে। এর মধ্যে ৬০০ ফুট রেললাইন ভেঙেছে দুটি জায়গায় ও একটি স্থানে ভেঙেছে ৩০০ ফুট। মূলত এই তিনটি জায়গায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ কোথাও কোথাও রেললাইনের নিচ থেকে মাটি ও পাথর সরে গিয়ে ২০ ফুটের মতো গর্ত হয়ে গেছে।

আজ দুপুরে দেখা যায়, বাদিয়াখালী স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রিফাইতপুর এলাকায় প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের ভাঙনের একটি স্থানে মেরামত কাজ করছেন মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি দল। লাইনের গর্ত ঠিক করার জন্য বস্তায় করে মাটি ফেলছেন শ্রমিকেরা। এই কাজ দেখাশোনা করছেন মো. মোস্তাকুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যার কারণে বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে। এই কারণে মেরামতের জন্য মালামাল নিয়ে আসা কঠিন হচ্ছে। তবে সড়ক ঠিক হলে কাজ আরও দ্রুত হবে।

বানের পানিতে দেবে গেছে রেললাইন। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।
বানের পানিতে দেবে গেছে রেললাইন। বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধা, ২৬ জুলাই। ছবি: খোরশেদ আলম।

সবচেয়ে বড় ভাঙন হয়েছে শিমুলতাইড় এলাকায়। এখানে ৬০০ ফুট রেললাইন ভেঙে পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে। লাইন ঝুলে আছে পানির ওপরে। মেরামত কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে ঠিকাদারদের নির্মাণশ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, এখানে পাইলের কাজ হবে। যেহেতু বড় কাজ, ফলে দেখেশুনে শুরু করতে হবে।

কত দিন পরে এ পথে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে? জানতে চাইলে লালমনিরহাটের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করছি ঈদের আগেই এ পথে ট্রেন চলাচল করবে। তবে মেরামত কাজের জন্য সর্বোচ্চ সীমা ধরা হয়েছে আগামী মাসের (আগস্ট) ২০ তারিখ পর্যন্ত।’

গাইবান্ধার বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত ও দেবে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাট থেকে শান্তাহার রুটে সব ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। ফলে এই রুটের হাজার হাজার যাত্রী রেলসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

এ দিকে বৃহস্পতিবার থেকে গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে সচল রুটে লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে ট্রেন চলাচল করছে বলে জানান গাইবান্ধা স্টেশনের মাস্টার আবুল কাশেম সরকার।