৭৯-তেও থামেননি কার্তিক পরামানিক

শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর সড়কে গাছ লাগাচ্ছেন কার্তিক পরামানিক।
শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর সড়কে গাছ লাগাচ্ছেন কার্তিক পরামানিক।

৭৯ বছর বয়সে এসেও গাছ লাগিয়ে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর ঠুটাপাড়া গামের বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিক। সেই যে ১০ বছর বয়স থেকে ধু ধু চরে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছিলেন, তা এখনো অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই কার্তিক পরামানিক নিজে চারা উৎপাদন করে নিজের খরচে তা সরকারি জায়গায় লাগিয়ে আসছেন। এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে, হাটবাজারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ঈদগাহ মাঠে, বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে তিনি গাছ লাগান। তাঁর লাগানো চারাগাছগুলো এখন বিরাট বিরাট বৃক্ষ হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে একেকটি কার্তিকনামা হয়ে।

গত বছর কার্তিক পরামানিক বেশি গাছ লাগাতে পারেননি। তাই এ বছর প্রায় ৮০০ গাছ লাগানোর ইচ্ছা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী সীমান্ত এলাকার মনোহরপুর সড়কে গাছ লাগাতে দেখা যায় তাঁকে। দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে মজুরদের সঙ্গে গাছ লাগানোর কাজে সহায়তা করতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি জানান, পাঁচ দিন ধরে এই সড়কে গাছ লাগাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক নিয়ে গাছ লাগানোর কাজ করছেন। কাঁচা চওড়া এই সড়কে ইতিমধ্যে তিনি ৬০০ গাছ লাগিয়েছেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই সড়কে গাছ লাগাচ্ছেন তিনি। কড়ই, অর্জুন, শিমুল, পাকুড়, আম, আমলকী প্রভৃতি গাছ লাগাচ্ছেন তিনি।

কার্তিক পরামানিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই ১০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগিয়ে আসছি। বর্ষাকাল এলেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। গাছ না লাগানো পর্যন্ত মনে শান্তি পাই না। এবার ৮০০ গাছ লাগানোর জন্য চারা তৈরি করেছি। এর আগে ডাকনিপাড়ার রাস্তা দুই পাশে ৫০টি গাছ লাগিয়েছি। এরপর কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সীমান্তবর্তী চর এলাকা আর আগের মতো ধু ধু বালুচর নেই। সবুজে ছেয়ে গেছে চারদিক। শুরু করেছিলাম আমি। কিন্তু এখন অনেকেই লাগান। তাঁরা নিজ নিজ জমিতে লাগালেও আমি রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাই। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় গাছ লাগানো শুরু করিনি। তবে গাছ লাগানোর ৫৩ বছর পর প্রথম আলো এই অজপাড়াগাঁয়ে এসে আমাকে খুঁজে পায় ২০০৩ সালে। পত্রিকায় আমাকে তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে কৃষি পদক দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন যোগাযোগ উপদেষ্টা আমার অনুরোধে মনাকষার হঠাৎপাড়া থেকে আমার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করে দিয়েছেন। এই রাস্তাতেই চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সেতু তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালে আমি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছি। অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে “আ ম্যান হু লাভস ট্রিজ” শিরোনামে সেটি অন্তর্ভুক্ত হয়।’

মনোহরপুর গামের বাসিন্দা, সাবেক ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, কার্তিক পরামানিকের মতো বৃক্ষপ্রেমী জেলায় আর একজনও নেই। আগে মানুষ তাঁকে পাগল বলত। আসলে এমন পাগল লোকের জন্যই এলাকার মানুষ এখন গর্বিত।