বন্যার কারণে কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি

বন্যায় ঘাসের জমিসহ ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। গোয়ালঘরে হাঁটুপানি। বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের গাদাগাদি। গবাদিপশু রাখার তেমন জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ঈদুল আজহার আগেই কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন কৃষকেরা। লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়ারা।

জানতে চাইলে সদর উপজেলার দারিয়াপুর হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন বলেন, ‘সাধারণত ঈদুল আজহার তিন-চার দিন আগে থেকে বেচাকেনা জমে। কিন্তু এ বছর এখন থেকেই হাটে গরু-ছাগলের আমদানি বেশি। বন্যার কারণে এটা হচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, ১০ জুলাই থেকে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গোয়ালঘর হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। উঁচু জায়গা, বাঁধ ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষই গাদাগাদি করে বাস করছে। সেখানে গরু-ছাগল রাখার জায়গা হচ্ছে না। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রয়েছে সাপের ভয়। তাই কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সদর উপজেলার চিথুলিয়াদিঘর গ্রামের চান মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদুল আজহার পর ছোট গরু কিনে রাখি। সারা বছর লালন-পালন করে পরের কোরবানি ঈদের দুই-তিন দিন আগে বিক্রি করি। এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে দায়দেনা মেটাই। কিন্তু এবার বন্যার কারণে গত বুধবার এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করি। ঈদের আগে বিক্রি করলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেচা যেত।’

সিধাই গ্রামের সোনা মিয়া বলেন, ‘১১ মাস আগোত ৩০ হাজার ট্যাকা দিয়া ছোট গরু কিনচিনো। এবারক্যা ইদোত বেচি নাবের ট্যাকা দিয়া বন্ধক জমি খুলনো হয়। কিন্তু বানের পানি হামার ঘরে সগ আশা কারি নিচে। নচ করি ৬৪ হাজার ট্যাকাত গরুকোনা বেচনো। ঈদোত বেচলে ৭৫ হাজার হলো হয়।’

চিথুলিয়াদিঘর ও সিধাই গ্রাম দুটি মোল্লারচর ইউনিয়নের। এ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, এ ইউনিয়নের চারদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ। বর্ষায় পানি ও শুকনা মৌসুমে নদী ভাঙে। এখানের চরে ভুট্টা, বাদাম ও গাঞ্জিয়া ধান ছাড়া অন্য ফসল তেমন হয় না। তাই বেশির ভাগ মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন–পালন করে সংসার চালান। কিন্তু এবার ঈদের আগে বন্যা এসেছে। ফলে রাখার জায়গা ও গো-খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এ সুযোগে ফড়িয়া মহাজনরা লাভবান হচ্ছেন।

গোঘাট গ্রামের ইজ্জত আলী বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই দারিয়াপুর হাটে ৪৮ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করেছি। ঈদে বেচলে দাম ৬৫ হাজার হতো।’

তবে দারিয়াপুর হাটের গরু ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, বন্যার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে না। কৃষকদের মানবিক দিক বিবেচনা করেই গরু-ছাগল কেনা হচ্ছে।

ফুলছড়ির ভাজনডাঙ্গা গ্রামের মতিন মিয়া বলেন, ‘কষটো দেকি এ্যাকনা গরু ৫০ হাজার ট্যাকাত বেচি দিনো। ইদোত বেচলে ৮০ হাজার হলো হয়।’

পাশের রতনপুর গ্রামের আনজু বেগম বলেন, ‘বান আচছে থাকি তিনটে ছাগোলোক চকিত থুয়া হামরা নাওয়োত ঘুমব্যার নাগচি। তারমদ্দে একট্যাক সাপে কামড়াচে। তাই ভয়ে বাকি দুটে কমদামে বেচি দিচি।’

ডাকাতিয়ারচর গ্রামের মোক্তার হোসেন বলেন, বন্যায় উঠোনে গো-খাদ্য হিসেবে রাখা খড়ের পাঁজা ভেসে গেছে। ঘাসের জমি ডুবে আছে। খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গত মঙ্গলবার নৌকা ভাড়া করে কম দামে একটি গরু ও দুটি ছাগল বিক্রি করেছেন।