ভাঙনের ১০ দিনের মাথায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকায় রেলপথ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে মেরামত শুরু হয়। আগামী ঈদুল আজহার আগে এ পথে ট্রেন চলাচল শুরুর আশা করা হচ্ছে।
বন্যার পানির চাপে বাদিয়াখালী থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সড়কে ৯৭ জায়গায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ১৭ জুলাই থেকে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে বিকল্প পথে রেলযোগাযোগ চালু আছে।
মেরামতকাজ চারটি গুচ্ছে চারজন ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন বুলবুল হোসেন, ফজলুল করিম, শামসুল আলম ও জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে বলা হয়েছে।
রেলের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ছয় কিলোমিটার পথে ছোট-বড় মিলে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথের পরিমাণ ৬৫০ মিটার। জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ চার ঠিকাদারকে করতে দেওয়া হয়েছে। জরুরি কাজ হওয়ায় মেরামতের টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সংস্কার করতে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা লাগতে পারে।
বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকায় বাসিন্দারা জানান, গাইবান্ধায় বাঁধ ভাঙার কারণে চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সোনালী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাদিয়াখালী ইউনিয়নে পানির চাপ বাড়ে। একই সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলায় কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভাঙায় এ ইউনিয়নের পূর্ব দিকে পানির ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। ১৭ জুলাই রেলপথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। স্রোতের মাত্রা বেড়ে গেলে রেলপথ থেকে পাথর ও মাটি সরে যেতে থাকে। একপর্যায়ে প্রবল স্রোতে বাদিয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ভাঙতে শুরু করে, যেটা রেল কর্তৃপক্ষের ভাষায় ‘ওয়াশ আউট’।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল সূত্র বলছে, বন্যায় বাদিয়াখালী থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জায়গায় ওয়াশ আউট হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় ৩ থেকে ১০ ফুট ভেঙেছে। বড় আকারে ভেঙেছে তিন স্থানে। এর মধ্যে ৬০০ ফুট রেলপথ ভেঙেছে দুটি জায়গায়। এ দুটি এলাকার মাঝামাঝি একটি স্থানে ৩০০ ফুট পরিমাণ রেলপথ ভেঙেছে। মূলত এই তিনটি জায়গায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। কোথাও কোথাও রেলপথের নিচ থেকে মাটি ও পাথর সরে গিয়ে ২০ ফুটের মতো গর্ত হয়ে রয়েছে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাদিয়াখালী স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রিফাইতপুর এলাকায় ১০ ফুট ভাঙা একটি স্থানে মেরামতের কাজ করছে মো. জাহাঙ্গীর আলমের একটি দল। রেলপথের গর্ত ঠিক করার জন্য বস্তায় করে মাটি ফেলছেন শ্রমিকেরা। এই কাজ দেখাশোনা করছেন মো. মোস্তাকুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকার সড়ক ভেঙে গেছে। তাই মেরামতের জন্য মালামাল নিয়ে আসা কঠিন হচ্ছে। তবে সড়ক ঠিক হলে কাজ আরও দ্রুত হবে।
সবচেয়ে বেশি ভেঙেছে শিমুলতারি এলাকায়। এখানে ৬০০ ফুট রেলপথ ভেঙে পুকুরের মতো হয়েছে। রেলপথ ঝুলে আছে পানির ওপর। এখানে মেরামত এখনো শুরু হয়নি। তবে ঠিকাদারের শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন মনির হোসেন। তিনি বলেন, এখানে পাইলিংয়ের কাজ হবে। বড় কাজ, এ কারণে দেখেশুনে শুরু করতে হবে।
লালমনিরহাটের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশা করছি, ঈদের আগেই এ পথে ট্রেন চলাচল করবে। তবে পুরো মেরামত করতে সর্বোচ্চ ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’