ময়মনসিংহে আট গ্রামে ভাঙন, তিন গ্রাম প্লাবিত

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের আটটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বুধবার বিকেলে খোদাবক্সপুর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের আটটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বুধবার বিকেলে খোদাবক্সপুর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের আটটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে ইতিমধ্যে কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কিছু বাড়িঘর।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আনুমানিক ১০ বছর ধরে ভাংনামারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙছে। এতে কয়েকটি গ্রামের অনেক পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে গ্রাম ছেড়েছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে অল্প অল্প করে ভাঙলেও বাঁধ নির্মাণ হয়নি। চলতি বর্ষায় আনুমানিক ১৫ দিন আগে থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ওই আটটি গ্রামের ভাঙন ছাড়া আরও তিনটি গ্রাম ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওই এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলো হচ্ছে মাঝেরটেক, চর ভাবখালী ও উজান কাশিয়ার চর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা ভাংনামারী ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ, ভাটিপাড়া, ভাংনামারীর চর, বয়ড়া, খোদাবক্সপুর, দুর্বাচর, গজারিপাড়া, খুলিয়ারচর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক, কালভার্টসহ সহস্রাধিক একর ফসলি জমি।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, কমপক্ষে ১০ বছর ধরে বর্ষাকালে ভাংনামারী ইউনিয়নের ওই সব গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর অল্প অল্প করে ভাঙে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু পরিবার নিজেদের বাড়িঘর ও ফসলের জমি হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

ছয় বছর আগে ভাংনামারী ইউনিয়নের খোদবক্সপুর গ্রামে বাঁধ নির্মাণের জন্য গ্রামবাসী নিজেদের মধ্য থেকে চাঁদা ওঠান। সেই টাকায় বালুর বস্তা দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে সেই বাঁধ পরের বছর ভেঙে যায়। এরপর ভাঙন রোধে আর কোনো বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুন নূর খোকা বলেন, চলতি বছর আবারও ভাঙন দেখা দেওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ভাঙনকবলিত ও পানিবন্দী পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ময়মনসিংহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ৭০টি স্থানে ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ভাংনামারী ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেও বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে ভাংনামারী  ইউনিয়নের মাঝেরটেক, চর ভাবখালী, উজান কাশিয়ার চরের শতাধিক ঘরবাড়ি। ওই সব পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে তলিয়ে গেছে অনন্ত খেয়াঘাট। নদের পানিতে ডুবে গেছে বয়রা বাজারের প্রবেশপথ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

প্লাবিত হওয়া তিন গ্রাম সম্পর্কে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম গত বৃহস্পতিবার বলেন, প্লাবিত তিনটি গ্রামের মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি না কমলে আরও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।