চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের বাধা উড়ালসড়ক

উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ বা সংস্থার পাইপলাইন ও খুঁটি স্থানান্তর ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ স্থগিত রেখে মেট্রোরেল নির্মাণকে প্রাধান্য দিলে এই জটিলতা দূর হবে।

চট্টগ্রাম নগরে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নির্মাণের প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড এই প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ। সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নুরুল হুদাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল স্থাপন করা হলে বন্দরনগরের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তিনটি এমআরটি লাইনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি লাইন-১, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর (শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর) পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের এমআরটি লাইন-২ এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার ও পাঁচলাইশ থেকে এ কে খান বাসস্টপেজ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৩ এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার। সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি এমআরটি লাইনে ৪৭টি স্টেশন থাকবে। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমআরটি লাইন-২ ও ৩ নির্মাণে অন্য প্রকল্পগুলোর সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে এমআরটি লাইন-১ নির্মাণে দুটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সিডিএ অ্যাভিনিউতে উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। আর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

এসব প্রতিবন্ধকতার সমাধানও দেওয়া হয়েছে প্রাক্–সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে। এতে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ স্থগিত রেখে এমআরটি স্থাপনকে অগ্রাধিকারের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পুনর্বিবেচনা করে সমন্বিতভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও এমআরটি স্থাপন করা যেতে পারে। তবে উড়ালসড়কের পাশ দিয়ে এমআরটি নির্মাণ করলে প্রকল্প ব্যয় অনেক বাড়বে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। তাই কাজ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলে ভালো হয়। তিনি বলেন, তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে কোনো সংস্থা বাধার সম্মুখীন না হয়।

নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরে জনবান্ধব গণপরিবহনব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য এমআরটি লাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। হলে মঙ্গল হতো। এখন উড়ালসড়ক হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। ফলে আগে মেট্রোরেল হলে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো না।

সিডিএ অনাপত্তিপত্র দিলে এমআরটি নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।

নগরের ৩২টি সেবা সংস্থাকে করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান আ জ ম নাছির উদ্দীন। 

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের কথা পরিকল্পনায় রেখে মেট্রোরেল নির্মাণের পরামর্শ দেন। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়েসহ সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিশদ আলোচনা করার অনুরোধ জানানো হয়।