চালকেরা ডাকেন জিয়ারা, জিয়ারা...

মদিনার মসজিদে নববির সামনে ও শহরের অন্যান্য রাস্তায় চালকেরা ‘জিয়ারা, জিয়ারা’ বলে হজযাত্রীদের ডাকাডাকি করেন। জিয়ারা মানে ‘ভ্রমণ’। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখানোর জন্য তাঁরা আহ্বান করেন। যাঁরা মদিনা এসে ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চান, তাঁরা ফজর নামাজের পরে বের হলে ভালোভাবে দেখতে পাবেন।

কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করে মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করলে সুবিধা বেশি। জিয়ারায় গিয়ে ওহুদ পাহাড়, মসজিদে কুবা ও কেবলাতাইন দেখা যায়। এতে জনপ্রতি ১০ রিয়াল পর্যন্ত খরচ পড়ে। অবশ্য এ প্যাকেজে খন্দক নেই। খন্দক আলাদাভাবে আরেক দিন দেখে আসা যায়। জেনে নিন মদিনায় এসে জিয়ারার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে:

ওহুদ পাহাড়: ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধের ইতিহাস এ পাহাড় ঘিরে। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, মাঝে একটু নিচু। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওহুদ পাহাড় মদিনার উত্তরে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং মরূদ্যানের স্তর থেকে ৩৫০ মিটার উঁচু। পাহাড়টি পাথরের। পূর্ব থেকে পশ্চিমে দৈর্ঘ্য নয় কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০০ থেকে ৩০০ মিটার। ওহুদ শব্দের অর্থ হলো এক বা একক। এটি অন্যান্য পাহাড় থেকে স্বতন্ত্র ও একক বলে ওহুদ নামকরণ করা হয়েছে। এতে অনেক চূড়া আছে। উঁচু চূড়ার কারণে দর্শকেরা একাধিক বড় ও ছোট পাহাড় আছে বলে ভুল করতে পারেন। অথচ এগুলো সবই ওহুদ পাহাড়ের অবিচ্ছিন্ন অংশ এবং পরস্পর সংযুক্ত। পাহাড়টি মূল্যবান পাথরে সমৃদ্ধ। পাহাড়ের পূর্বের সীমানা বিমানবন্দর রোড এবং পশ্চিম সীমানা আল-উজুন গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত।

মসজিদে কুবা: মুসলমানদের প্রথম মসজিদ কুবা। মসজিদে নববি থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান। ধবধবে সাদা রঙে অন্যান্য নির্মাণশৈলীতে গড়া এই মসজিদের ভেতরে পরিবেশ এত আবেগপূর্ণ থাকে যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কূপের নাম অনুসারে কুবার নামকরণ হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, তখন তিনি সাহাবাদের সঙ্গে নিয়ে নিজের পবিত্র হাতে এই মসজিদ তৈরি করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় ঢুকে শহরের প্রবেশদ্বার কুবায় নামাজ পড়েন। এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ, যেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায়ে একটি ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়।

কেবলাতাইন মসজিদ: কেবলাতাইন মসজিদ মানে দুই কেবলার মসজিদ। আগে বায়তুল আকসার দিকে কেবলা ছিল। পরে ওহির মাধ্যমে কাবা শরিফের দিকে কেবলা হয়। নামাজ আদায়ে দাঁড়িয়ে ওহি পাওয়ার পর আল-আকসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নামাজের মাঝখানে কাবামুখী হয়ে পরবর্তী অংশ সম্পন্ন করা হয়। এ জন্য এই মসজিদের নাম কেবলাতাইন (দুই কেবলার মসজিদ)। ভেতরে মূল পুরোনো অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদ বাড়ানো হয়েছে।

মসজিদে গামামাহ: গামামাহ শব্দের অর্থ বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে নামাজ আদায় করেছেন। তাই এটি মসজিদে গামামাহ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে প্রথম ঈদের নামাজ আদায় করেন। একে ঈদগাহের মসজিদও বলে।

বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স: মদিনা শহরে তাবুক সড়কে বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স। হজ শেষে হাজিরা যখন বিমানবন্দর ও হজ টার্মিনাল দিয়ে দেশে ফেরেন, তখন তাঁদের হাতে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পবিত্র কোরআন শরিফ। এখান থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ কপি কোরআন শরিফ প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কোরআনের অর্থ ও তফসির বই আকারে, ভিডিও, সিডি, ক্যাসেট আকারে প্রকাশ করা হয়। রয়েছে কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার। যেকেউ চাইলেই যেতে পারেন বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে। এখানে পবিত্র কোরআন বিনা মূল্যে বিলি করা হয়।

খেজুরের মার্কেট: মদিনার মসজিদে নববির কাছে খেজুর মার্কেট। অনেক দোকানেই বাংলাদেশি দোকানদার। বিভিন্ন ধরনের খেজুর আলাদা আলাদাভাবে স্তূপাকারে সাজানো থাকে। এখন থেকে বাছাই করে খেজুর কেনা যায়।

খন্দক: মক্কার মুশরিক, কুরাইশ, ইহুদি, বেদুইন পৌত্তলিক সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল, তাই একে আজহাব যুদ্ধ বলে। এটি খন্দকের যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত। খন্দক অর্থ পরিখা। পরিখা খননের মাধ্যমে শত্রুকে কাবু করার নতুন রণকৌশল ছিল। মুসলমানরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধের ময়দানে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.)-র পরামর্শে মদিনার সমস্ত প্রবেশপথে কূপ ও প্রাচীর তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মুসলমানরা। চাইলে খন্দক ঘুরে আসতে পারেন।