বিপদে গরু-ছাগলের খামারিরা

ফরিদপুরের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চর গোপালপুর গ্রামের হালিম চৌধুরী। গতকাল চরভদ্রাসন উপজেলার চর ঝাউকান্দায়।  ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চর গোপালপুর গ্রামের হালিম চৌধুরী। গতকাল চরভদ্রাসন উপজেলার চর ঝাউকান্দায়। ছবি: প্রথম আলো
>
  • বন্যা পরিস্থিতি
  • জামালপুরে প্রায় আড়াই হাজার গরু-ছাগলের খামার রয়েছে
  • ১ হাজার ২০০টি খামারে বন্যার পানি উঠেছে

চারদিকে থইথই পানি, মধ্যে এক টুকরো উঁচু জমিতে গাদাগাদি করে থাকছে মানুষ। ওই জমিতেই ঠাঁই হয়েছে শত শত গবাদিপশুর। এ দৃশ্য দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোরবানির পশুর হাট বসেছে। জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা এলাকায় এমন দৃশ্য বেশি চোখে পড়বে। এসব এলাকার বন্যাপীড়িত নিম্ন আয়ের মানুষেরা সস্তায় গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন। একই অবস্থা স্থানীয় খামারি ও অবস্থাসম্পন্ন কৃষকদের।

গবাদিপশুর বড় জোগান আসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। বন্যার কারণে এসব এলাকার কৃষক ও খামারিদের অনেকে বাজারমূল্যের চেয়ে কমে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এর কারণ, গরু রাখার জায়গা নেই, আবার খাবারেরও সংকট। বিশেষ করে ঘাস চাষের জমি ডুবে গেছে। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন ছাগল লালন-পালনকারীরা। বন্যা বা জলাবদ্ধতা হলে ছাগল দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে ছাগলও কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারি ও কৃষকেরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে গরু-ছাগলের যত্ন কীভাবে নিতে হবে সে ব্যাপারে খামারিদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের যেসব জেলায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 জামালপুর জেলায় প্রায় আড়াই হাজার গরু-ছাগলের খামার রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০টি খামারে বন্যার পানি উঠেছে। ফলে এসব খামারের গরু উঁচু স্থানে রাখতে হচ্ছে। কোরবানির হাট শুরু হওয়া পর্যন্ত গরু রাখার অবস্থা নেই অনেক খামারির। বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর কোরবানির হাটে প্রায় ১০ লাখ গরু উদ্বৃত্ত ছিল। কোরবানির ঠিক আগে গরুর দাম পড়ে গেলে অনেক খামারি ও ব্যাপারী লোকসানের মুখে পড়েন। এবার কোরবানির মাসখানেক আগে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও গবাদিপশু রাখার সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষের জন্য ত্রাণ দেওয়া হলেও গবাদিপশুর জন্য সে রকম ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় বিপদে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার খামারিরা।

গরুর খামারের জন্য সিরাজগঞ্জ প্রসিদ্ধ। এই জেলার ১ লাখ ৪০ হাজার গরু ও গাভি লালন-পালন হয়, যা থেকে দিনে তিন লাখ লিটার দুধ আসে। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গরুর খাবার ঘাস উৎপাদিত হয়। বন্যার পানিতে এসব খামার ও ঘাসের জমি ডুবে গেছে। ফলে দুধের উৎপাদনও কমে গেছে। অনেকে বন্যার পানি থেকে রক্ষা করতে গাভি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের জয়পুরা থেকে জগতলা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার নতুন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সেলিম হোসেন জানান, এক সপ্তাহ ধরে ১২টি গরু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাও ত্রাণসহায়তা পাননি, গবাদিপশুরও খাবার জুটছে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ৭৬ হাজার গবাদিপশু বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে অাশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় তিন টন গোখাদ্য বন্যার্ত গোখামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বন্যাকবলিত রংপুর, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি গরু-ছাগল লালন–পালন হয়। ওই এলাকাগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যাকবলিত থাকায় খামারিরা বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্য এলাকা থেকে ফড়িয়ারা নৌকায় করে এসে সস্তায় এসব গরু নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য সারা বছর গরু-ছাগল লালন-পালন করে খামারিরা বিপদে আছেন।