রঙিন কাগজের নৌকা ভাসিয়ে বর্ষা উদ্যাপন

সুরমা নদীর চাঁদনিঘাটে রঙিন কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিচ্ছে শিশুরা। ছবি: আনিস মাহমুদ
সুরমা নদীর চাঁদনিঘাটে রঙিন কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিচ্ছে শিশুরা। ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট নগরকে দুই ভাগ করে রেখেছে সুরমা নদী। উত্তর অংশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চাঁদনিঘাট। এ ঘাট মাড়িয়েই শতবর্ষ আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট শহরে পা দিয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী সে ঘাটে শনিবার দেখা গেল একদল ছোট ছেলেমেয়ের ভিড়। তারা নদীর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে লাল-নীল কাগজের নৌকা। সন্ধ্যা যখন ছয়টা, তখন তারা একযোগে নদীর পানিতে নৌকা ভাসিয়ে দেয়।

নৌকা ভাসিয়ে ছেলেমেয়েদের সে কী উচ্ছ্বাস। ছোটদের সে উচ্ছ্বাসে একসময় উপস্থিত বড়রাও যোগ দেন। নিজেদের ছেলেমেয়েদের হাতে তৈরি নৌকা তাঁরাও পানিতে ভাসিয়ে ফিরে যান ফেলে আসা শৈশবে। আর এভাবেই নৌকা ভাসিয়ে শিশু-কিশোরদের সংগঠন পাঠশালা সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ষা উৎসবের উদ্বোধন হয়। ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ শীর্ষক এ আয়োজনের উদ্বোধনী পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বর্ষার গান ও আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। নগরের কিনব্রিজ এলাকার সম্মিলিত নাট্য পরিষদের মহড়াকক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়।

সন্ধ্যা সাতটায় সাংস্কৃতিক পর্ব শুরুর আগে আমন্ত্রিত অতিথি ও উপস্থিত দর্শনার্থীদের কাগজের তৈরি কদম ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় মহড়াকক্ষে বৃষ্টি পড়ার শব্দ সাউন্ড মাধ্যমে বাজানো হয়। পরে পাঠশালার খুদে শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। এ পর্ব সঞ্চালন করেছে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জয়িতা জেহেন প্রিয়তী। লোকছড়া ‘আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, সুয্যি গেল পাটে/ খুকু গেছে জল আনতে পদ্মদিঘির ঘাটে’ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সম্মিলিত পরিবেশনা শুরু হয়। এরপর খুদে শিল্পীরা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতাসহ মোট চারটি কবিতা আবৃত্তি করেছে। পাশাপাশি তারা সম্মেলক কণ্ঠে দুটি গানও পরিবেশন করেছে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নিয়েছে খুদে শিল্পী ঈয়াশফীন ইবরাহীম, মোহাম্মদ জাঈন ইবরাহীম, হৃদিতা পাল, মাহিয়াত তাসনিম, অনিন্দ মোদক, আদিবা কাশিশ, রদি রানী শীল, নবনীতা মোদক, হৃদ্যিক দেব, আলিশবা মাহভীন, যারিন আনজুম, তনুশ্রী দেবনাথ, সৈয়দা তাসনিম নূর, আহনাফুর রহমান, মাহভীন রশীদ মানহা, আমিরা রশীদ আনমিলা, ইনায়া আজমী, সৈয়দ জাফীরুল হক জাওয়াদ, রাজর্ষি তালুকদার, ফারদিয়া ফাইরোজ সানজা, ফারহীন ইব্রাহীম, মহাশ্বেতা দেব পুরকায়স্থ, যানাত যাহরা, আয়মান আহমদ চৌধুরী, মায়মান আহমদ চৌধুরী, অদিত্য ধর, মোহাম্মদ নাফিস সাদিক, জারতাজ হাসান, নাফিসা তাবাসুম, সারিহা চৌধুরী, আফসারা তালবিয়া চৌধুরী, মাহজাবিন হোসেন, মাহিদ হাসান, মোহাম্মদ শাইয়ান হোসেন, সাবাহাত কোরেশী প্রমুখ।

খুদে শিল্পীদের পরিবেশনার পরপরই ছিল আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনা। এ পর্ব সঞ্চালন করেন সামান্তা ঘোষ। এতে সংগীতশিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, মিতালী চক্রবর্তী, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, পদ্মিনী ইমন প্রমুখ। তাঁরা ‘শাওন রাতে যদি’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, ‘আজ শ্রাবণ বাতাস বুকে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘বাদলা দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘আজি ঝরঝর’, ‘আয় বৃষ্টি আয়’, ‘আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকো’সহ বেশকিছু গান পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে কি-বোর্ডে উজ্জ্বল চক্রবর্তী এবং তবলায় চিন্ময় কর ছিলেন। সাংস্কৃতিক পর্বের পাশাপাশি বর্ষা উদ্‌যাপনে ছিল বর্ষাবিষয়ক চিত্র প্রদর্শনীও। ২৫ জন খুদে আঁকিয়ের ২৫টি চিত্রকর্ম এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল।