ডেঙ্গুতে ধূসর আশা-ভরসা

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী। পাশে স্বজন। গতকাল বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী। পাশে স্বজন। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

অনেক আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে ঢাকায় কোচিং করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এডিস মশার কামড়ে তাঁদের সে আশা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁদের। ভর্তি হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার লক্ষ্যে ঢাকায় কোচিং করছিলেন। তিনজন ঢাকায় পড়াশোনা করেন। একজন গিয়েছিলেন চাকরির সন্ধানে।

জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সুলতান আহমেদ গতকাল শনিবার বলেন, এখানে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের সবাই ঢাকা থেকে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, এখানে চিকিৎসাধীন স্বাগত রায় (২০) রংপুর নগরের গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা শংকর রায়ের ছেলে। তিনি প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হতে দুই মাস আগে ঢাকায় যান। ফার্মগেটে মেসে থাকতেন। ২১ জুলাই ঢাকায় তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরদিনই তিনি রংপুরে চলে আসেন। ভর্তি হন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

স্বাগত হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য অনেক আশা নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। প্রস্তুতিও ভালো ছিল। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় এখন কী হবে, জানি না।’

মিঠাপুকুর উপজেলার বলদিপুকুর এলাকার আবিদ বিন আহসানও প্রকৌশল কোচিংয়ের জন্য ঢাকায় যান। তিনিও থাকতেন মেসে। ১৯ জুলাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। গত মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেন তিনি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। আবিদ বলেন, ‘আমার হয়তো আর ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করা হবে না।’ তাঁর বাবা সামিউল হাসান বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করে একটা ভালো জায়গায় ভর্তি হবে। কিন্তু সেই আশা মনে হয় আর পূরণ হচ্ছে না। ডেঙ্গু সব স্বপ্ন তছনছ করে দিল।’

নগরের মাহিগঞ্জ এলাকার প্রণয় চন্দ্র সরকারও প্রকৌশল কোচিং করার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ২১ জুলাই তিনি ফিরে একই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর বাবা অনন্ত চন্দ্র সরকার কৃষক। অনন্ত বলেন, ‘ডেঙ্গু সব আশা শেষ করে দিয়েছে। এখন হাসপাতাল থেকে ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই তাঁদের স্বস্তি।’

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আতাউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান কুষ্টিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির সন্ধানে ১২ জুন ঢাকায় যান। চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। গত সোমবার তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। আতাউর আক্ষেপ করে বললেন, ‘ছেলে কখন সুস্থ হয়ে উঠবে, সেই আশায় আছি।’

কুড়িগ্রামের আলী আকবরের ছেলে অনীক ইসলাম ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরদিন আলী আকবর গিয়ে তাঁকে বাড়ি নিয়ে এসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।

এদিকে মশকনিধন, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার শুরু করা হয়েছে। তা এখনো চলছে। সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান বলেন, করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন।