চিথুলিয়া এখন জনশূন্য

বন্যায় ভেসে গেছে বাড়িঘর। বিরান চরে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। গতকাল গাইবান্ধা সদর উপজেলার চিথুলিয়ার চরে।  প্রথম আলো
বন্যায় ভেসে গেছে বাড়িঘর। বিরান চরে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। গতকাল গাইবান্ধা সদর উপজেলার চিথুলিয়ার চরে। প্রথম আলো

মনোয়ারা বেগমের বাড়ি ছিল ব্রহ্মপুত্রের চিথুলিয়ার চরে। ছিল চারটি ছাগল। এখন ‘ছিল’ বলতে হচ্ছে। কারণ, এসবের কিছুই এখন নেই। ১০ জুলাই বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে সবই। এখন মনোয়ারা আশ্রয় নিয়েছেন ব্রহ্মপুত্রের সিধাই চরে।

শুধু মনোয়ারা নন, বন্যায় গাইবান্ধা সদরের মোল্লার চর ইউনিয়নের চিথুলিয়া চরের ৩ হাজার ২০০ মানুষ এখন উদ্বাস্তু। আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের চরে। কেউ চলে গেছেন অন্য জেলায়ও। ব্রহ্মপুত্রের প্রবল স্রোতে চিথুলিয়া এখন খাঁ খাঁ, প্রায় পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে। এ চরে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। সেগুলোও এখন নদীর মধ্যে।

জেলা সদর থেকে চিথুলিয়ার চর প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। শুকনো কিংবা বর্ষা মৌসুম হোক, যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা নৌকা। সদর থেকে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট থেকে নৌকায় করে চিথুলিয়ার চরে যেতে হয়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লাগে দেড় ঘণ্টা। ২০০ গজ দূর থেকেও প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই, এখানে একটি চর ছিল। তবে আরও কাছে গেলে জনবসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, চরটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা। প্রায় ২০ বছর ধরে এ চরে মানুষ বাস করছিলেন, তবে এখন কেউ নেই।

গতকাল শনিবার দুপুরে চরটির পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায়, চরের এক একর জায়গা এখন দৃশ্যমান। এর মধ্যে পানি রয়েছে অধিকাংশ জায়গায়। অন্য এলাকাগুলোয় গভীর পানি। দৃশ্যমান অংশে জঙ্গলের মধ্যে দুটি ভাঙা বাড়ির আসবাব পড়ে রয়েছে। সেখানে খড়ের পালার অবশিষ্ট অংশও রয়েছে। কয়েকটি ভাঙা বাঁশের খুঁটি পানির স্রোতে এদিক-ওদিক দোল খাচ্ছে।

চরটির সাতজন বাসিন্দা জানান, চিথুলিয়া চরে অন্তত ৯০০ জন ভোটার ছিলেন। লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। চরটি বিভিন্ন রকমের গাছগাছালিতে ভরপুর ছিল। তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ছিল। সব এখন নদীর পেটে।

ব্রহ্মপুত্রে এখন আগের মতো স্রোত নেই। তাই বসতভিটা দেখার জন্য নৌকা নিয়ে এসেছেন জহুরুল ইসলাম। জল ছলছল চোখে তিনি বললেন, ‘মেলা ট্যাকা পয়সা ঘরত আছিল। বছর খানিক মোর ভালো ভাবে চলি গ্যালো হয়। কোনো চিন্তা আছিল না। মুই ক্যা আজগা ইলিপের দিকে চ্যায়া থাকিম? দেখার জন্য আচ্চি, চর জাগি উঠল কি না।’

মোল্লার চর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু সুফিয়ান বলেন, চিথুলিয়া ছাড়াও মোল্লার চর ইউনিয়নের কাচির চরেরও পুরোটা বিলীন হয়ে গেছে। এ চরের ১৫০ পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। আর বাজে চিথুলিয়া চরের আংশিক ভেঙে ২০০ পরিবার ভাসমান জীবন যাপন করছেন।