সাঁওতালপল্লিতে হত্যা-অগ্নিসংযোগে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালপল্লিতে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ রোববার গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমের (সিজিএম) আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর তিন ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন অনেকে।

ওই ঘটনার দুই বছর আট মাস পর আজ আদালতে জমা পড়ল অভিযোগপত্র। এতে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ, একই ইউপির সদস্য শাহ আলম, আইয়ুব আলী, চিনিকলের (জিএম-অর্থ) নাজমুল হুদাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

পিবিআই গাইবান্ধা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) ও সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

আবদুল হাই সরকার আরও বলেন, এ পর্যন্ত এই মামলায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া সাঁওতালদের লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

রংপুর চিনিকল স্থাপনের জন্য আখ চাষ করতে ১৯৬২ সালে গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম এলাকার ১ হাজার ৮৪০ একর জমি রিকুইজিশন করা হয়। এসব ছিল স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি। চুক্তি অনুযায়ী, যে কাজের (আখ চাষ) জন্য জমি রিকুইজিশন করা হয়েছে, তা না করা হলে আগের মালিকদের জমি ক্ষতিপূরণসহ দিতে হবে। ২০০৪ সালে রংপুর চিনিকল বন্ধ হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাষাবাদ শুরু করেন। জমি ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আন্দোলন শুরু করলে মিথ্যা মামলা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ, প্রশাসনসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উচ্ছেদের নামে হামলা করে বলে সাঁওতালদের অভিযোগ। পুলিশ ও চিনিকলশ্রমিক–কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জন পুলিশ সদস্য তিরবিদ্ধ ও চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন সাঁওতাল মারা যান।

এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে সাপমারা ইউপির চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

ওই ঘটনার পর হাইকোর্ট দুটি মামলা তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন।