ঈদযাত্রায় ভুলতায় ভোগান্তির বড় ভয়

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের হবিগঞ্জে ছোট–বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার  বাহুবল উপজেলার আব্দানাড়াইলে।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের হবিগঞ্জে ছোট–বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাহুবল উপজেলার আব্দানাড়াইলে। ছবি: প্রথম আলো

ঈদযাত্রায় ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে ভোগান্তির বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা। সেখানে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ চলছে। পথ হয়ে গেছে সংকীর্ণ। ফলে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। এতে এখনই প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

এর বাইরে এই মহাসড়কের হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারের ১২টি জায়গায় আছে ছোট–বড় খানাখন্দ। কোথাও দেবে গেছে সড়ক। সেখানে যানবাহন চলতে হচ্ছে ধীরে ধীরে। সব মিলিয়ে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে এবারের ঈদযাত্রায় এটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি যান চলাচলের জন্য খুবই চমৎকার বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, সিলেট জেলার যে দু–একটি অংশে টুকটাক খানাখন্দ রয়েছে, তা সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে।

আর সওজ হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সিলেটে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে মহাসড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর আগে সামান্য একটু অংশেও খানাখন্দ ছিল না। ভাঙা অংশ সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষকে কোনো দুর্ভোগই পোহাতে হবে না।’

>নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের কাজ চলছে। মহাসড়কের ১২ জায়গায় আছে খানাখন্দ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় উড়ালসড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডার নির্মাণকাজ এবং দুপাশের লোহার নিরাপত্তা পাইপ রং ও ঘষামাজার কাজ চলছে। সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজও চলছে। ফলে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে সংকীর্ণ পথে চলছে যানবাহন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে। উড়ালসড়ল নির্মাণকাজে ঠিকাদারের নিযুক্ত প্রধান রাজমিস্ত্রি সুজন আকন্দ বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়েছেন। আমরা সে চেষ্টা করছি।’

নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্যা তসলিম হোসেন বলেন, ঈদের আগে উড়ালসড়কটি চালু করা গেলে ঘরমুখী মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ভুলতা উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহম্মেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের বেপরোয়া গতি দিনে দিনে সমস্যা হয়ে উঠছে। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলছে নির্বিঘ্নে।

তিতাস নদের ওপর নির্মিত শাহবাজপুর নতুন সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতুর সংযোগস্থল থেকে উভয় দিকে পাথর ও মাটিমিশ্রিত রাস্তার ওপর দিয়েই যানবাহন চলছে। শাহবাজপুর, রামপুরা ও রাজাবাড়িয়া এলাকায় এবং আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের সোহাগপুর, বেড়তলা এলাকায় সড়কের উভয় পাশে সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার ৯টি জায়গা খানাখন্দে ভরা। এর বাইরে সিলেটের লালাবাজার ও বাহাপুর এবং মৌলভীবাজারের শেরপুর অংশেও খানাখন্দ রয়েছে। সরেজমিনে হবিগঞ্জের ভাঙাচোরা অংশ সংস্কারে তিনটি জায়গায় শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি বাজারে মহাসড়কের পাশে দেওতইল গ্রামের দিনমজুর ফুল মিয়া (৫০) বলেন, চার–পাঁচ দিন আগে এ সড়কে সংস্কারকাজ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আবারও আগের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট]