বিকাশ হিসাবের পিন নম্বরটি তারা জানল কীভাবে?

‘হ্যালো আমি বিকাশ থেকে বলছি। আমাদের এখানে সিকিউরিটি প্রবলেম হচ্ছে। আমি আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেব। আপনার পিন নম্বর তো অটো... ৪৩১০১।’

এবার বেশ অবাক হয়ে যান গৃহবধূ হুসনে আরা হালিম। তাঁর পিন নম্বর কীভাবে জানল? বিকাশের পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি তাঁকে বলেন, ‘আপনাকে কয়েকটি এসএমএস পাঠালাম। এতে কিছু কোড আছে। কোডগুলো আপনার মোবাইলে চাপুন।’ এরপর হুসনে আরা হালিমের কাছে পর পর কয়েকটি খুদে বার্তা আসে। তবে তিনি কোডগুলো মুঠোফোনে না টিপে স্বামী সাইফুল হালিমকে জানান। পরে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, হুসনে আরার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারক চক্র দুই হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অবশ্য বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকাশ থেকে কারও পিন নম্বর জানা সম্ভব না। গ্রাহকেরা প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে পিন নম্বর শেয়ার করে ফেলেন বলে প্রতারণার কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। বিকাশ কর্তৃপক্ষই বলছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে দিনে ৬০ থেকে ১০০টি অভিযোগ আসে, এর মধ্যে প্রতারণা ও প্রতারণার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

বিকাশের একজন কর্মকর্তা বললেন, গ্রাহককে টাকা উত্তোলন বা অন্য কোনো কারণে পিন নম্বর প্রবেশের সময় সতর্ক থাকা দরকার। বিকাশ এজেন্টের কাছে বা কেনাকাটার সময় ৪ বা ৫টি সংখ্যার পিন নম্বর মোবাইলে চাপার সময় সেখানে থাকা প্রতারকেরা অনেক সময় তা দেখে মনে রাখে। পরে সিম ক্লোন বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করে টাকা তুলে দেয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো না কোনো ভাবে পিন নম্বর বেহাত হয়। তাই গ্রাহককেই সতর্ক থাকতে হবে।

স্ত্রীর ঘটনাটি বলতে গিয়ে রাজধানীর গুলশান-১ এর বাসিন্দা সাইফুল হালিম জানান, গত শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে তাঁর স্ত্রীর কাছে ০১৪০২৮৮৬৩১৭ নম্বর থেকে ফোনে বিকাশের কর্মী পরিচয়ে কথা বলেছিলেন এক ব্যক্তি। স্ত্রীর কাছে ঘটনা জেনে বিকাশের কাস্টমার কেয়ার ১৬২৪৭ এ ফোন দেন তিনি।

সাইফুল হালিম বলেন, ‘আমি তাদের ঘটনা বলার পর কাস্টমার কেয়ার থেকে বলা হয়, আমার স্ত্রীর নম্বর থেকে সমস্যা হয়েছে, তাই সেই নম্বর থেকে ফোন করতে হবে। পরে আবার ফোন দিলে কাস্টমার কেয়ার থেকে বলা হয়, আমার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে ০১৪০২৮৮৬৩১৭ নম্বরে টাকা সরিয়ে নিয়ে অন্য একটি নম্বরে ট্রান্সফার করে দিয়েছে এবং টাকা ক্যাশ আউট (তুলে নেওয়া হয়েছে) হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কী করতে পারি জানতে চাই। তখন আমাকে থানায় জিডি করতে বলা হয়।

সাইফুল বলেন, তাঁর স্ত্রীর বিকাশ অ্যাকাউন্টে যতটুকু টাকা ছিল, তাই তোলা হয়েছে। কিছুদিন আগেও অ্যাকাউন্টে ত্রিশ হাজার টাকা ছিল। স্ত্রী তিন ধাপে ১০ হাজার করে টাকা তুলে তাঁর ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখেন। তা না হলে হয়তো পুরো টাকাটাই হয়তো প্রতারকেরা তুলে নিত।

বিকাশ লিমিটেডের করপোরেট যোগাযোগ এবং জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ লেনদেনে বিকাশ আন্তর্জাতিক মানের সেরা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এর সিস্টেমে ঢুকে বা হ্যাকিং করে কোনো গ্রাহকের পিন নম্বর নেওয়া অসম্ভব। বিকাশের কোনো কর্মীও পিন নম্বর জানেন না। গ্রাহক নিজেই পিন নম্বর দিয়ে থাকেন। বিকাশে অ্যাকাউন্টে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

তাহলে প্রতারণার ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটছে জানতে চাইলে শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, প্রতারকেরা কথার জালে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নেন, পিন নম্বর নিয়ে নেন। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যে গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, বিকাশে প্রতিদিন ৬০ লাখের ওপর লেনদেনের ঘটনা ঘটছে। দিনে গড়ে ছয়-সাত শ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। প্রযুক্তির নিরাপত্তার কারণেই মানুষ বিকাশে আস্থা রাখছে।

প্রতারণার কটি অভিযোগ আসে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দিনে ৬০ থেকে ১০০টি অভিযোগ আসে গ্রাহকদের। এর মধ্যে প্রতারণা ও প্রতারণার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। লেনদেনের তুলনায় অভিযোগ কম হলেও বিকাশে প্রতারণার অভিযোগ যাতে একেবারেই না ঘটে সে লক্ষ্যে কাজ করছে। কেউ অভিযোগ করলে সাময়িকভাবে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, পূর্ণ তদন্তের জন্য ভুক্তভোগী গ্রাহককে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এরপরই আমরা পূর্ণ তদন্ত শুরু করতে পারি। আমরা সব অ্যাকাউন্টের তথ্য রাখি। সাধারণত প্রতারকেরা অর্থ তুলে নিয়ে নম্বরটি বন্ধ করে দেয়। তবে নম্বরটি খোলা মাত্রই তা শনাক্ত করা সম্ভব।’