কে বলেছে চোখ না থাকলে স্বপ্ন দেখা যায় না?

মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের উদ্ভাবক ভাস্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে জিপিএ-৫ পাওয়া শাকিল খান। ছবি: সংগৃহীত
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের উদ্ভাবক ভাস্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে জিপিএ-৫ পাওয়া শাকিল খান। ছবি: সংগৃহীত

চোখের দৃষ্টি না থাকলেও যে স্বপ্ন দেখা যায়, চেষ্টা আর অধ্যবসায়ে সেই স্বপ্নকে সত্যি করা যায়, সেটাই প্রমাণ করলেন চট্টগ্রামের ছাত্র মুহাম্মদ শাকিল খান। দৃষ্টিহীন এই তরুণ এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পূরণ করেছেন নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন।

নিজের জীবনের সংগ্রাম আর সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে খানিকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শাকিল। তিনি বলছিলেন, ‘সারা জীবন স্বপ্ন ছিল বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে কোনো সরকারি কলেজের শিক্ষক হব। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর মনে হলো, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়তো অসম্ভব নয়। এই ফলাফল আমাকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।’

শাকিলের স্বপ্ন পূরণের পথে তাঁর সঙ্গী হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি, ইউএসএইডের মাধ্যমে পরিচালিত এটুআই প্রকল্প। এই প্রকল্পের আইল্যাবের (ইনোভেশন ল্যাবের) উদ্ভাবন মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক সহযোগিতা করছে শাকিলের মতো বহু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীকে। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক মূলত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাঠ্যবই পড়ে শোনায়।

এটুআইয়ের এই উদ্যোগের কথা জানাতে গিয়ে শাকিল বলেন, ‘এটুআইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এই মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক আসার আগে আমার শিক্ষাগ্রহণ অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পেয়ে লেখাপড়াটা অনেক বেশি সহজ হয়েছে। এমনও অনেক সময় হয়েছে, আমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি, আমার মা এসে ডিভাইসটি নিয়ে গেছেন। এটুআইয়ের এই উদ্যোগের কারণে আজ আমি বিশ্বাস করি যে আমার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।’

শাকিলের মতোই আরেকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাইফউদ্দিন রাফি। চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে তিনিও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর পাঠ্যজীবনেরও সবচেয়ে বড় সঙ্গী মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। শুধু এইচএসসিতেই নয়, এসএসসি পরীক্ষায়ও টকিং বুকের সাহায্য নিয়ে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

নিজের সাফল্যের পথে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের অবদানের কথা জানাতে গিয়ে রাফি বলেছেন, ‘আমি পিএসই, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। জেএসসি থেকে আমার সঙ্গী হলো এটুআইয়ের মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। আজকের সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এটুআইয়েরই। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পাওয়ার আগে আমার বোনেরা আমাকে পড়ে শোনাতেন। এরপর মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক আসায় আমার জীবনটা অনেক বেশি সহজ হয়েছে।’

মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের উদ্ভাবক ও এটুআইয়ের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। নিজের আলোহীন জীবনের সংগ্রাম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি উদ্যোগ নেন মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক তৈরির। ভাস্কর বলেন, ‘লেখাপড়া করতে গিয়ে যে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে, সেখান থেকেই আমার চিন্তায় এসেছিল মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। আমি চেয়েছিলাম, আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যারা আছে, তারা কেউ যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। এটুআইয়ের স্বপ্ন হলো বই পড়ার সুযোগ যেন সবাই পায়, কেউ যেন দৃষ্টিহীনতার কারণে বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।’