হোটেলে, লঞ্চে নিয়ে ছাত্রীদের ধর্ষণ করতেন তিনি

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তিনি। শিশুশিক্ষার্থীদের বোঝাতেন—শিক্ষকের সঙ্গে সফর করা শিক্ষার্থীদের কর্তব্য। এ ধরনের কথা বলে শিশুছাত্রীদের নিয়ে যেতেন মাদ্রাসার বাইরে। নিয়ে যেতেন হোটেলে বা লঞ্চের কেবিনে। সেখানে ধর্ষণ করতেন তাদের। ওই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তারের পর পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এ কথা জানিয়েছে র‍্যাব।

চার ছাত্রীকে নিপীড়নের অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড়ের দারুল হুদা আল ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানার অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছিল র‍্যাব। গতকাল রোববার পর্যন্ত ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পাঁচ শিশুসহ ছয়জনকে একাধিকবার ধর্ষণ এবং আরও পাঁচটি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে র‍্যাবের কাছে।

গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামশের উদ্দিন।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা জানান, অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রীও ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তিনি মাদ্রাসাতেই থাকতেন। এর মধ্যেই তিনি শিশুদের একের পর এক নিপীড়ন করেছেন।

অধ্যক্ষের নিকটাত্মীয় আট বছরের একটি শিশুও তাঁর নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ শিশুদের নিজের কক্ষে নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়ে তিনি মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেছেন একাধিক শিশুকে। চিৎকার করলে কয়েকজনকে মারধরও করেছেন। অধ্যক্ষ মনগড়া কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে সেগুলোকেই ধর্মীয় বাণী হিসেবে শিশুদের মধ্যে প্রচার করতেন। গত তিন বছরে এভাবে পাঁচ শিশুসহ ছয়জনকে ধর্ষণ এবং পাঁচ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নিপীড়ন করেছেন। তাঁর নির্যাতনের শিকার শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া মনগড়া ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে বিয়ের নামে এক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন, পরে আবার নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে তালাক বলে বিদায়ও করে দিয়েছেন।

র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বলেন, শয়তানের তাড়নায় তিনি এসব অনৈতিক কাজ করেছেন।

এর আগে গত ২৭ জুন ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। এরপর ৪ জুলাই এক ছাত্রীর অভিভাবকের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলার মাহমুদপুর এলাকায় বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। পরে তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক শিশুকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের অভিযোগে মামলা হয়েছে।